Tuesday 20 August 2013



যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।

একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে ॥

যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ওরে ও অভাগা,

যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়--

তবে পরান খুলে

ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে ॥

যদি সবাই ফিরে যায়, ওরে ওরে ও অভাগা,

যদি গহন পথে যাবার কালে কেউ ফিরে না চায়--

তবে পথের কাঁটা

ও তুই রক্তমাখা চরণতলে একলা দলো রে ॥

যদি আলো না ধরে, ওরে ওরে ও অভাগা,

যদি ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে দুয়ার দেয় ঘরে--

তবে বজ্রানলে

আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলো রে ॥

রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1312
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1905
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
==========================================
বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান,

আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান॥

মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে

এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান॥

আজ এনে দিলে, হয়তো দিবে না কাল--

রিক্ত হবে যে তোমার ফুলের ডাল।

এ গান আমার শ্রাবণে শ্রাবণে তব বিস্মৃতিস্রোতের প্লাবনে

ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবে তরণী বহি তব সম্মান॥


রাগ: মল্লার
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৪ শ্রাবণ, ১৩৪৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩০ জুলাই, ১৯৩৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
================================================

আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী।

তুমি থাক সিন্ধুপারে ওগো বিদেশিনী॥

তোমায় দেখেছি শারদপ্রাতে, তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে,

তোমায় দেখেছি হৃদি-মাঝারে ওগো বিদেশিনী।

আমি আকাশে পাতিয়া কান শুনেছি শুনেছি তোমারি গান,

আমি তোমারে সঁপেছি প্রাণ ওগো বিদেশিনী।

ভুবন ভ্রমিয়া শেষে আমি এসেছি নূতন দেশে,

আমি অতিথি তোমারি দ্বারে ওগো বিদেশিনী॥

রাগ: খাম্বাজ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ আশ্বিন, ১৩০২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1895
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সরলা দেবী

==========================================
আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে।

বাঁশি, তোমায় দিয়ে যাব কাহার হাতে।

তোমার বুকে বাজল ধ্বনি

বিদায়গাথা, আগমনী, কত যে--

ফাল্গুনে শ্রাবণে, কত প্রভাতে রাতে॥

যে কথা রয় প্রাণের ভিতর অগোচরে

গানে গানে নিয়েছিলে চুরি করে।

সময় যে তার হল গত

নিশিশেষের তারার মতো--

শেষ করে দাও শিউলিফুলের মরণ-সাথে॥


রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1332
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1925
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
========================================
যে ছিল আমার স্বপনচারিণী

তারে বুঝিতে পারি নি।

দিন চলে গেছে খুঁজিতে খুঁজিতে॥

শুভক্ষণে কাছে ডাকিলে,

লজ্জা আমার ঢাকিলে গো,

তোমারে সহজে পেরেছি বুঝিতে॥

কে মোরে ফিরাবে অনাদরে,

কে মোরে ডাকিবে কাছে,

কাহার প্রেমের বেদনায় আমার মূল্য আছে,

এ নিরন্তর সংশয়ে হায় পারি নে যুঝিতে--

আমি তোমারেই শুধু পেরেছি বুঝিতে॥


রাগ: ভৈরবী-কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২২ অগ্রহায়ণ, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৮ ডিসেম্বর, ১৯৩৮
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
==========================================
মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই।

ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই॥

চলে যায় দিন, যতখন আছি পথে যেতে যদি আসি কাছাকাছি

তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই--

তাই অকারণে গান গাই॥

ফাগুনের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুনের অবসানে--

ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া, আর কিছু নাহি জানে।

ফুরাইবে দিন, আলো হবে ক্ষীণ, গান সারা হবে, থেমে যাবে বীন,

যতখন থাকি ভরে দিবে না কি এ খেলারই ভেলাটাই--

তাই অকারণে গান গাই॥


রাগ: খাম্বাজ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৯ ফাল্গুন, ১৩৩৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ মার্চ, ১৯২৭
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
================================================
তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে,

এ আগুন ছড়িয়ে গেল সব খানে॥

যত সব মরা গাছের ডালে ডালে

নাচে আগুন তালে তালে রে,

আকাশে হাত তোলে সে কার পানে ॥

আঁধারের তারা যত অবাক্‌ হয়ে রয় চেয়ে,

কোথাকার পাগল হাওয়া বয় ধেয়ে।

নিশীথের বুকের মাঝে এই-যে অমল

উঠল ফুটে স্বর্ণকমল,

আগুনের কী গুণ আছে কে জানে ॥


রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৮ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ এপ্রিল, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
================================================
ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান--
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান--
আমার আপনহারা প্রাণ আমার বাঁধন-ছেড়া প্রাণ॥
তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে,
তোমার ঝাউয়ের দোলে
মর্মরিয়া ওঠে আমার দুঃখরাতের গান॥
পূর্ণিমাসন্ধ্যায় তোমার রজনীগন্ধায়
রূপসাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়।
তোমার প্রজাপতির পাখা আমার আকাশ-চাওয়া মুগ্ধ চোখের রঙিন-স্বপন-মাখা। 
তোমার চাঁদের আলোয় মিলায় আমার দুঃখসুখের সকল অবসান॥
===========================================
তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা।

ওই-যে সুদূর নীহারিকা

যারা করে আছে ভিড় আকাশের নীড়,

ওই যারা দিনরাত্রি

আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী গ্রহ তারা রবি,

তুমি কি তাদের মতো সত্য নও।

হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি॥

নয়নসমুখে তুমি নাই,

নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই-- আজি তাই

শ্যামলে শ্যামল তুমি, নীলিমায় নীল।

আমার নিখিল তোমাতে পেয়েছে তার অন্তরের মিল।

নাহি জানি, কেহ নাহি জানে--

তব সুর বাজে মোর গানে,

কবির অন্তরে তুমি কবি--

নও ছবি, নও ছবি, নও শুধু ছবি॥

রাগ: কানাড়া
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ কার্তিক, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২১ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: এলাহাবাদ
======================================
ফুলে ফুলে ঢ'লে ঢ'লে বহে কিবা মৃদু বায়,

তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়

পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে কুহূ কুহূ কুহূ গায়,

কি জানি কিসেরি লাগি প্রাণ করে হায় হায়!


রাগ: বিলাতি ভাঙা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1289
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1882
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী
==================================================
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে

জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ॥

এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্‌ভ্রান্ত মেঘে মন চায়

মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥

মেঘমল্লার সারা দিনমান।

বাজে ঝরনার গান।

মন হারাবার আজি বেলা, পথ ভুলিবার খেলা-- মন চায়

মন চায় হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে॥


রাগ: কাফি
তাল: ২ + ২ ছন্দ
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
=============================================
অচেনাকে ভয় কী আমার ওরে?

অচেনাকেই চিনে চিনে উঠবে জীবন ভরে ॥

জানি জানি আমার চেনা কোনো কালেই ফুরাবে না,

চিহ্নহারা পথে আমায় টানবে অচিন ডোরে ॥

ছিল আমার মা অচেনা, নিল আমায় কোলে।

সকল প্রেমই অচেনা গো, তাই তো হৃদয় দোলে।

অচেনা এই ভুবন মাঝে কত সুরেই হৃদয় বাজে--

অচেনা এই জীবন আমার,

বেড়াই তারি ঘোরে ॥

রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৩ আশ্বিন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১০ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: বুদ্ধগয়া
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
===============================================
কত অজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই--

দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু, পরকে করিলে ভাই॥

পুরানো আবাস ছেড়ে যাই যবে মনে ভেবে মরি কী জানি কী হবে,

নূতনের মাঝে তুমি পুরাতন সে কথা যে ভুলে যাই॥

জীবনে মরণে নিখিল ভুবনে যখনি যেখানে লবে

চিরজনমের পরিচিত ওহে তুমিই চিনাবে সবে।

তোমারে জানিলে নাহি কেহ পর, নাহি কোনো মানা, নাহি কোনো ডর--

সবারে মিলায়ে তুমি জাগিতেছ দেখা যেন সদা পাই॥

রাগ: হাম্বীর
তাল: রূপকড়া
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1313
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1907
===========================================
কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসারই ঘায়ে--

নিবিড় বেদনাতে পুলক লাগে গায়ে॥

তোমার অভিসারে যাব অগম-পারে

চলিতে পথে পথে বাজুক ব্যথা পায়ে॥

পরানে বাজে বাঁশি, নয়নে বহে ধারা--

দুখের মাধুরীতে করিল দিশাহারা

সকলই নিবে-কেড়ে, দিবে না তবু ছেড়ে--

মন সরে না যেতে, ফেলিলে একি দায়ে॥

রাগ: দেশ-কেদারা
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1336
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1929
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===========================================
মেঘ বলেছে 'যাব যাব', রাত বলেছে 'যাই',

সাগর বলে 'কূল মিলেছে-- আমি তো আর নাই' ॥

দুঃখ বলে 'রইনু চুপে তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে',

আমি বলে 'মিলাই আমি আর কিছু না চাই' ॥

ভুবন বলে 'তোমার তরে আছে বরণমালা',

গগন বলে 'তোমার তরে লক্ষ প্রদীপ জ্বালা'।

প্রেম বলে যে 'যুগে যুগে তোমার লাগি আছি জেগে',

মরণ বলে 'আমি তোমার জীবনতরী বাই' ॥


রাগ: বেহাগ
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ আশ্বিন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৪ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
===============================================
আমার মল্লিকাবনে যখন প্রথম ধরেছে কলি

তোমার লাগিয়া তখনি, বন্ধু, বেঁধেছিনু অঞ্জলি॥

তখনো কুহেলীজালে,

সখা, তরুণী উষার ভালে

শিশিরে শিশিরে অরুণমালিকা উঠিতেছে ছলোছলি॥

এখনো বনের গান, বন্ধু হয় নি তো অবসান--

তবু এখনি যাবে কি চলি।

ও মোর করুণ বল্লিকা,

ও তোর শ্রান্ত মল্লিকা

ঝরো-ঝরো হল, এই বেলা তোর শেষ কথা দিস বলি॥


রাগ: কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1337
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1931
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
============================================
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন--

আমার ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন ॥

যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায় আপন কুলায়-মাঝে,

সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,

তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন--

আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥

অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন-ডোরে,

মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ'রে।

যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে একে একে তারা,

আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা,

অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন--

আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥


রাগ: মিশ্র ভীমপলশ্রী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১৩২৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===============================================
শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আম্‌লকির এই ডালে ডালে।

পাতাগুলি শির্‌শিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে॥

উড়িয়ে দেবার মাতন এসে কাঙাল তারে করল শেষে,

তখন তাহার ফলের বাহার রইল না আর অন্তরালে॥

শূন্য করে ভরে দেওয়া যাহার খেলা

তারি লাগি রইনু বসে সকল বেলা।

শীতের পরশ থেকে থেকে যায় বুঝি ওই ডেকে ডেকে,

সব খোওয়াবার সময় আমার হবে কখন কোন্‌ সকালে॥


রাগ: বেহাগ-খাম্বাজ-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1328
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1922
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
================================================
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।

ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।

আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।

মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।

মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়--

বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।

হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়--

আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়॥


রাগ: মিশ্র ভূপালী-বিলাতি ভাঙা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
==============================================
আমার এই পথ-চাওয়াতেই আনন্দ।

খেলে যায় রৌদ্র ছায়া, বর্ষা আসে বসন্ত ॥

কারা এই সমুখ দিয়ে আসে যায় খবর নিয়ে,

খুশি রই আপন মনে-- বাতাস বহে সুমন্দ ॥

সারাদিন আঁখি মেলে দুয়ারে রব একা,

শুভখন হঠাৎ এলে তখনি পাব দেখা।

ততখন ক্ষণে ক্ষণে হাসি গাই আপন-মনে,

ততখন রহি রহি ভেসে আসে সুগন্ধ ॥

রাগ: খাম্বাজ-কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ চৈত্র, ১৩১৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1912
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===============================================
কোন্‌ খেলা যে খেলব কখন্‌ ভাবি বসে সেই কথাটাই--

তোমার আপন খেলার সাথি করো, তা হলে আর ভাবনা তো নাই ॥

শিশির-ভেজা সকালবেলা আজ কি তোমার ছুটির খেলা--

বর্ষণহীন মেঘের মেলা তার সনে মোর মনকে ভাসাই ॥

তোমার নিঠুর খেলা খেলবে যে দিন বাজবে সে দিন ভীষণ ভেরী--

ঘনাবে মেঘ, আঁধার হবে, কাঁদবে হাওয়া আকাশ ঘেরি।

সে দিন যেন তোমার ডাকে ঘরের বাঁধন আর না থাকে--

অকাতরে পরানটাকে প্রলয়দোলায় দোলাতে চাই ॥


রাগ: খাম্বাজ-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৫ ভাদ্র, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২২ অগাস্ট, ১৯২২
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: সুভাষ চৌধুরী, অনাদিকুমার দস্তিদার, শান্তিদেব ঘোষ
================================================
তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে টুকরো করে কাছি

আমি ডুবতে রাজি আছি আমি ডুবতে রাজি আছি ॥

সকাল আমার গেল মিছে, বিকেল যে যায় তারি পিছে গো--

রেখো না আর, বেঁধো না আর কূলের কাছাকাছি ॥

মাঝির লাগি আছি জাগি সকল রাত্রিবেলা,

ঢেউগুলো যে আমায় নিয়ে করে কেবল খেলা।

ঝড়কে আমি করব মিতে, ডরব না তার ভ্রূকুটিতে--

দাও ছেড়ে দাও, ওগো, আমি তুফান পেলে বাঁচি ॥


রাগ: সারিগান
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ ভাদ্র, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: সুধীরচন্দ্র কর

===============================================
সেই ভালো সেই ভালো, আমারে না হয় না জান ।
দূরে গিয়ে নয় দু:খ দেবে, কাছে কেন লাজে লাজানো ।।
মোর বসন্তে লেগেছে তো সুর, বেণুবনছায়া হয়েছে মধুর–
থাক্‌-না এমনি গন্ধে-বিধুর মিলনকুঞ্জ সাজানো ।।
গোপনে দেখেছি তোমার ব্যাকুল নয়নে ভাবের খেলা ।
উতল আঁচল, এলোথেলো চুল, দেখেছি ঝড়ের বেলা ।
তোমাতে আমাতে হয় নি যে কথা মর্মে আমার আছে সে বারতা–
না-বলা বাণীর নিয়ে আকুলতা আমার বাঁশিটি বাজানো ।।
==========================================
পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে

পাগল আমার মন জেগে ওঠে॥

চেনাশোনার কোন্‌ বাইরে যেখানে পথ নাই নাই রে

সেখানে অকারণে যায় ছুটে॥

ঘরের মুখে আর কি রে কোনো দিন সে যাবে ফিরে।

যাবে না, যাবে না--

দেয়াল যত সব গেল টুটে॥

বৃষ্টি-নেশা-ভরা সন্ধ্যাবেলা কোন্‌ বলরামের আমি চেলা,

আমার স্বপ্ন ঘিরে নাচে মাতাল জুটে--

যত মাতাল জুটে।

যা না চাইবার তাই আজি চাই গো,

যা না পাইবার তাই কোথা পাই গো।

পাব না, পাব না,

মরি অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে॥

রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
=============================================
বড়ো আশা ক'রে এসেছি গো, কাছে ডেকে লও,

ফিরায়ো না জননী।।

দীনহীনে কেহ চাহে না, তুমি তারে রাখিবে জানি গো।

আর আমি-যে কিছু চাহি নে, চরণতলে বসে থাকিব।

আর আমি-যে কিছু চাহি নে, জননী ব’লে শুধু ডাকিব।

তুমি না রাখিলে, গৃহ আর পাইব কোথা, কেঁদে কেঁদে কোথা বেড়াব–

ওই-যে হেরি তমসঘনঘোরা গহন রজনী।।


রাগ: ঝিঁঝিট
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1289
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1882
=================================================
মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরে

একেলা রয়েছ নীরব শয়ন-'পরে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥

রুদ্ধ দ্বারের বাহিরে দাঁড়ায়ে আমি

আর কতকাল এমনে কাটিবে স্বামী--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥

রজনীর তারা উঠেছে গগন ছেয়ে,

আছে সবে মোর বাতায়ন পানে চেয়ে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো।

জীবনে আমার সঙ্গীত দাও আনি,

নীরব রেখো না তোমার বীণার বাণী--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥

মিলাব নয়ন তব নয়নের সাথে,

মিলাব এ হাত তব দক্ষিণহাতে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো।

হৃদয়পাত্র সুধায় পূর্ণ হবে,

তিমির কাঁপিবে গভীর আলোর রবে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥


রাগ: বেহাগ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: সুরুল
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
==================================================
ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে

ও বন্ধু আমার!

না পেয়ে তোমার দেখা, একা একা দিন যে আমার কাটে না রে ॥

বুঝি গো রাত পোহালো,

বুঝি ওই রবির আলো

আভাসে দেখা দিল গগন-পারে--

সমুখে ওই হেরি পথ, তোমার কি রথ পৌঁছবে না মোর-দুয়ারে ॥

আকাশের যত তারা

চেয়ে রয় নিমেষহারা,

বসে রয় রাত-প্রভাতের পথের ধারে।

তোমারি দেখা পেলে সকল ফেলে ডুববে আলোক-পারাবারে।

প্রভাতের পথিক সবে

এল কি কলরবে--

গেল কি গান গেয়ে ওই সারে সারে!

বুঝি-বা ফুল ফুটেছে, সুর উঠেছে অরুণবীণার তারে তারে ॥


রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২০ পৌষ, ১৩২৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
রচনাস্থান: কলকাতা
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==============================================



No comments:

Post a Comment