Tuesday 20 August 2013


তুমি কোন্‌ কাননের ফুল, কোন্‌ গগনের তারা।

তোমায় কোথায় দেখেছি যেন কোন্‌ স্বপনের পারা ॥

কবে তুমি গেয়েছিলে, আঁখির পানে চেয়েছিলে

ভুলে গিয়েছি।

শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ওই নয়নের তারা ॥

তুমি কথা কোয়ো না, তুমি চেয়ে চলে যাও।

এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গ'লে যাও।

আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে চেয়ে থাকি মধুর প্রাণে,

তোমার আঁখির মতন দুটি তারা ঢালুক কিরণধারা ॥


রাগ: মিশ্র পিলু-বারোয়াঁ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1293
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1886
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================
না চাহিলে যারে পাওয়া যায়, তেয়াগিলে আসে হাতে,

দিবসে সে ধন হারায়েছি আমি-- পেয়েছি আঁধার রাতে॥

না দেখিবে তারে, পরশিবে না গো, তারি পানে প্রাণ মেলে দিয়ে জাগো--

তারায় তারায় রবে তারি বাণী, কুসুমে ফুটিবে প্রাতে॥

তারি লাগি যত ফেলেছি অশ্রুজল

বীণাবাদিনীর শতদলদলে করিছে সে টলোমল।

মোর গানে গানে পলকে পলকে ঝলসি উঠিছে ঝলকে ঝলকে,

শান্ত হাসির করুণ আলোকে ভাতিছে নয়নপাতে॥

রাগ: কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): কার্তিক, ১৩৪০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1933
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
========================================
ফুলে ফুলে ঢ'লে ঢ'লে বহে কিবা মৃদু বায়,

তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়

পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে কুহূ কুহূ কুহূ গায়,

কি জানি কিসেরি লাগি প্রাণ করে হায় হায়!


রাগ: বিলাতি ভাঙা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1289
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1882
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী
========================================
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,

আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,

চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,

মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,

বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে--

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,

তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।



যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,

কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, আহা,

ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের,

শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়--

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,

তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।



তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে,

কাটবে দিন কাটবে,

কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন কাটে, আহা,

ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সে দিন উঠবে ভরি--

চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে।

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,

তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।



তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।

সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি-- আহা,

নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,

আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,

তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে॥

রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ এপ্রিল, ১৯১৬
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে

আমার নামটি লিখো-- তোমার

মনের মন্দিরে।

আমার পরানে যে গান বাজিছে

তাহার তালটি শিখো-- তোমার

চরণমঞ্জীরে॥

ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে

আমার মুখর পাখি-- তোমার

প্রাসাদপ্রাঙ্গণে॥

মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো

আমার হাতের রাখী-- তোমার

কনককঙ্কণে॥

আমার লতার একটি মুকুল

ভুলিয়া তুলিয়া রেখো-- তোমার

অলকবন্ধনে।

আমার স্মরণ শুভ-সিন্দুরে

একটি বিন্দু এঁকো-- তোমার

ললাটচন্দনে।

আমার মনের মোহের মাধুরী

মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-- তোমার

অঙ্গসৌরভে।

আমার আকুল জীবনমরণ

টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো-- তোমার

অতুল গৌরবে॥


রাগ: কীর্তন
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৮ আশ্বিন, ১৩০৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1897
রচনাস্থান: সাজাদপুর
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
==============================================
মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই।

ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই॥

চলে যায় দিন, যতখন আছি পথে যেতে যদি আসি কাছাকাছি

তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই--

তাই অকারণে গান গাই॥

ফাগুনের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুনের অবসানে--

ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া, আর কিছু নাহি জানে।

ফুরাইবে দিন, আলো হবে ক্ষীণ, গান সারা হবে, থেমে যাবে বীন,

যতখন থাকি ভরে দিবে না কি এ খেলারই ভেলাটাই--

তাই অকারণে গান গাই॥


রাগ: খাম্বাজ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৯ ফাল্গুন, ১৩৩৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ মার্চ, ১৯২৭
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===============================================
তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে টুকরো করে কাছি

আমি ডুবতে রাজি আছি আমি ডুবতে রাজি আছি ॥

সকাল আমার গেল মিছে, বিকেল যে যায় তারি পিছে গো--

রেখো না আর, বেঁধো না আর কূলের কাছাকাছি ॥

মাঝির লাগি আছি জাগি সকল রাত্রিবেলা,

ঢেউগুলো যে আমায় নিয়ে করে কেবল খেলা।

ঝড়কে আমি করব মিতে, ডরব না তার ভ্রূকুটিতে--

দাও ছেড়ে দাও, ওগো, আমি তুফান পেলে বাঁচি ॥


রাগ: সারিগান
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ ভাদ্র, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: সুধীরচন্দ্র কর
==========================================
বড়ো আশা ক'রে এসেছি গো, কাছে ডেকে লও,

ফিরায়ো না জননী।।

দীনহীনে কেহ চাহে না, তুমি তারে রাখিবে জানি গো।

আর আমি-যে কিছু চাহি নে, চরণতলে বসে থাকিব।

আর আমি-যে কিছু চাহি নে, জননী ব’লে শুধু ডাকিব।

তুমি না রাখিলে, গৃহ আর পাইব কোথা, কেঁদে কেঁদে কোথা বেড়াব–

ওই-যে হেরি তমসঘনঘোরা গহন রজনী।।


রাগ: ঝিঁঝিট
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1289
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1882
============================================
সহে না যাতনা

দিবস গণিয়া গণিয়া বিরলে

নিশিদিন বসে আছি শুধু পথপানে চেয়ে--

সখা হে, এলে না।

সহে না যাতনা॥

দিন যায়, রাত যায়, সব যায়--

আমি বসে হায়!

দেহে বল নাই, চোখে ঘুম নাই--

শুকায়ে গিয়াছে আঁখিজল।

একে একে সব আশা ঝ'রে ঝ'রে প'ড়ে যায়--

সহে না যাতনা॥


রাগ: মিশ্র বেহাগ
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
===============================================
বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে।
শূন্য ঘাটে একা আমি, পার ক’রে লও খেয়ার নেয়ে।।
ভেঙে এলেম খেলার বাঁশি, চুকিয়ে এলেম কান্না হাসি,
সন্ধ্যাবায়ে শ্রান্তকায়ে ঘুমে নয়ন আসে ছেয়ে।।
ও পারেতে ঘরে ঘরে সন্ধ্যাদীপ জ্বলিল রে,
আরতির শঙ্খ বাজে সুদূর মন্দির-’পরে।
এসো এসো শ্রান্তিহরা, এসো শান্তি-সুপ্তি-ভরা,
এসো এসো তুমি এসো, এসো তোমার তরী বেয়ে।।
=============================================
ও আমার দেশের মাটি, তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা।

তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা ॥

তুমি মিশেছ মোর দেহের সনে,

তুমি মিলেছ মোর প্রাণে মনে,

তোমার ওই শ্যামলবরন কোমল মূর্তি মর্মে গাঁথা ॥

ওগো মা, তোমার কোলে জনম আমার, মরণ তোমার বুকে।

তোমার 'পরে খেলা আমার দুঃখে সুখে।

তুমি অন্ন মুখে তুলে দিলে,

তুমি শীতল জলে জুড়াইলে,

তুমি যে সকল-সহা সকল-বহা মাতার মাতা ॥

ও মা, অনেক তোমার খেয়েছি গো, অনেক নিয়েছি মা--

তবু জানি নে-যে কী বা তোমায় দিয়েছি মা!

আমার জনম গেল বৃথা কাজে,

আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে--

তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে শক্তিদাতা ॥


রাগ: পিলু-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1312
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1905
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
===========================================
বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে।
শূন্য ঘাটে একা আমি, পার ক’রে লও খেয়ার নেয়ে।।
ভেঙে এলেম খেলার বাঁশি, চুকিয়ে এলেম কান্না হাসি,
সন্ধ্যাবায়ে শ্রান্তকায়ে ঘুমে নয়ন আসে ছেয়ে।।
ও পারেতে ঘরে ঘরে সন্ধ্যাদীপ জ্বলিল রে,
আরতির শঙ্খ বাজে সুদূর মন্দির-’পরে।
এসো এসো শ্রান্তিহরা, এসো শান্তি-সুপ্তি-ভরা,
এসো এসো তুমি এসো, এসো তোমার তরী বেয়ে।।
=========================================
ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু,

পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু॥

এই-যে হিয়া থরোথরো কাঁপে আজি এমনতরো

এই বেদনা ক্ষমা করো, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো প্রভু ॥

এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু,

পিছন-পানে তাকাই যদি কভু।

দিনের তাপে রৌদ্রজ্বালায় শুকায় মালা পূজার থালায়,

সেই ম্লানতা ক্ষমা করো, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো প্রভু ॥


রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৬ আশ্বিন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
মেঘ বলেছে 'যাব যাব', রাত বলেছে 'যাই',

সাগর বলে 'কূল মিলেছে-- আমি তো আর নাই' ॥

দুঃখ বলে 'রইনু চুপে তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে',

আমি বলে 'মিলাই আমি আর কিছু না চাই' ॥

ভুবন বলে 'তোমার তরে আছে বরণমালা',

গগন বলে 'তোমার তরে লক্ষ প্রদীপ জ্বালা'।

প্রেম বলে যে 'যুগে যুগে তোমার লাগি আছি জেগে',

মরণ বলে 'আমি তোমার জীবনতরী বাই' ॥


রাগ: বেহাগ
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ আশ্বিন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৪ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
=============================================
হে ক্ষণিকের অতিথি,

এলে প্রভাতে কারে চাহিয়া

ঝরা শেফালির পথ চাহিয়া ॥

কোন্‌ অমরার বিরহিণীরে চাহ নি ফিরে,

কার বিষাদের শিশিরনীরে এলে নাহিয়া ॥

ওগো অকরুণ, কী মায়া জানো,

মিলনছলে বিরহ আনো।

চলেছ পথিক আলোকযানে আঁধার-পানে

মনভুলানো মোহনতানে গান গাহিয়া ॥


রাগ: ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1332
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1925
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
=============================================


No comments:

Post a Comment