Thursday 22 August 2013



এসো শ্যামল সুন্দর,

আনো তব তাপহরা তৃষাহরা সঙ্গসুধা।

বিরহিণী চাহিয়া আছে আকাশে॥

সে যে ব্যথিত হৃদয় আছে বিছায়ে

তমালকুঞ্জপথে সজল ছায়াতে,

নয়নে জাগিছে করুণ রাগিণী॥

বকুলমুকুল রেখেছে গাঁথিয়া,

বাজিছে অঙ্গনে মিলনবাঁশরি।

আনো সাথে তোমার মন্দিরা

চঞ্চল নৃত্যের বাজিবে ছন্দে সে--

বাজিবে কঙ্কণ, বাজিবে কিঙ্কিণী,

ঝঙ্কারিবে মঞ্জীর রুণু রুণু॥


রাগ: দেশ
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1344
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1937
স্বরলিপিকার: শান্তিদেব ঘোষ
=============================================
দুজনে দেখা হল মধুযামিনী রে--

কেন কথা কহিল না, চলিয়া গেল ধীরে॥

নিকুঞ্জে দখিনাবায় করিছে হায়-হায়,

লতাপাতা দুলে দুলে ডাকিছে ফিরে ফিরে॥

দুজনের আঁখিবারি গোপনে গেল বয়ে,

দুজনের প্রাণের কথা প্রাণেতে গেল রয়ে।

আর তো হল না দেখা, জগতে দোঁহে একা--

চিরদিন ছাড়াছাড়ি যমুনাতীরে॥

রাগ: বেহাগ-খাম্বাজ-কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, সরলা দেবী
==========================================
শ্যামল ছায়া, নাইবা গেলে

শেষ বরষার ধারা ঢেলে॥

সময় যদি ফুরিয়ে থাকে-- হেসে বিদায় করো তাকে,

এবার নাহয় কাটুক বেলা অসময়ের খেলা খেলে॥

মলিন, তোমার মিলাবে লাজ--

শরৎ এসে পরাবে সাজ।

নবীন রবি উঠবে হাসি, বাজাবে মেঘ সোনার বাঁশি--

কালোয় আলোয় যুগলরূপে শূন্যে দেবে মিলন মেলে॥

রাগ: ভৈরবী
তাল: ষষ্ঠী
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ভাদ্র, ১৩৩২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1925
===========================================
সময় পাবে না আর, নামিছে অন্ধকার,

গোধুলিতে আলো-আঁধারে

পথিক যে পথ ভোলে॥

পশ্চিমগগনে ওই দেখা যায় শেষ রবিরেখা,

তমাল-অরণ্যে ওই শুনি শেষ কেকা।

কে আমার অভিসারিকা বুঝি বাহিরিল অজানারে খুঁজি,

শেষবার মোর আঙিনার দ্বার খোলে॥

রাগ: মূলতান
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
=============================================
শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে।

কুঞ্জপথে, সখি, কৈসে যাওব অবলা কামিনী রে।

উন্মদ পবনে যমুনা তর্জিত, ঘন ঘন গর্জিত মেহ।

দমকত বিদ্যুত, পথতরু লুন্ঠিত, থরহর কম্পিত দেহ

ঘন ঘন রিম্‌ ঝিম্‌ রিম্‌ ঝিম্‌ রিম্‌ ঝিম্‌ বরখত নীরদপুঞ্জ।

শাল-পিয়ালে তাল-তমালে নিবিড়তিমিরময় কুঞ্জ।

কহ রে সজনী, এ দুরুযোগে কুঞ্জে নিরদয় কান

দারুণ বাঁশী কাহ বজায়ত সকরুণ রাধা নাম।

মোতিম হারে বেশ বনা দে, সীঁথি লগা দে ভালে।

উরহি বিলুন্ঠিত লোল চিকুর মম বাঁধহ চম্পকমালে।

গহন রয়নমে ন যাও, বালা, নওলকিশোরক পাশ।

গরজে ঘন ঘন, বহু ডর পাওব, কহে ভানু তব দাস।

রাগ: পিলু-মল্লার
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১২৮৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1878
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===========================================
চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে।

অন্তরে আজ দেখব, যখন আলোক নাহি রে॥

ধরায় যখন দাও না ধরা হৃদয় তখন তোমায় ভরা,

এখন তোমার আপন আলোয় তোমায় চাহি রে॥

তোমায় নিয়ে খেলেছিলেম খেলার ঘরেতে।

খেলার পুতুল ভেঙে গেছে প্রলয় ঝড়েতে।

থাক্‌ তবে সেই কেবল খেলা, হোক-না এখন প্রাণের মেলা--

তারের বীণা ভাঙল, হৃদয়-বীণায় গাহি রে॥


রাগ: ইমন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২১ ফাল্গুন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৫ মার্চ, ১৯১৫
রচনাস্থান: সুরুল
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
=========================================
বন্ধু, রহো রহো সাথে

আজি এ সঘন শ্রাবণপ্রাতে।

ছিলে কি মোর স্বপনে সাথিহারা রাতে॥

বন্ধু, বেলা বৃথা যায় রে

আজি এ বাদলে আকুল হাওয়ায় রে--

কথা কও মোর হৃদয়ে, হাত রাখো হাতে॥

রাগ: ভৈরবী
তাল: মধ্যমান
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1332
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1925
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=============================================
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে

তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে ॥

একতারাটির একটি তারে গানের বেদন বইতে নারে,

তোমার সাথে বারে বারে হার মেনেছি এই খেলাতে

তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে ॥

আমার এ তার বাঁধা কাছের সুরে,

ওই বাঁশি যে বাজে দূরে।

গানের লীলার সেই কিনারে যোগ দিতে কি সবাই পারে

বিশ্বহৃদয়পারাবারে রাগরাগিণীর জাল ফেলাতে--

তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে?।


রাগ: খাম্বাজ
তাল: দাদরা-খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1326
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1919
========================================
তোমরা যা বলো তাই বলো, আমার লাগে না মনে।

আমার যায় বেলা, বয়ে যায় বেলা কেমন বিনা কারণে॥

এই পাগল হাওয়া কী গান-গাওয়া

ছড়িয়ে দিয়ে গেল আজি সুনীল গগনে॥

সে গান আমার লাগল যে গো লাগল মনে,

আমি কিসের মধু খুঁজে বেড়াই ভ্রমরগুঞ্জনে।

ওই আকাশ-ছাওয়া কাহার চাওয়া

এমন ক'রে লাগে আজি আমার নয়নে॥

রাগ: বেহাগ-কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1328
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1921
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=======================================
দিন অবসান হল।

আমার আঁখি হতে অস্তরবির আলোর আড়াল তোলো ॥

অন্ধকারের বুকের কাছে নিত্য-আলোর আসন আছে,

সেথায় তোমার দুয়ারখানি খোলো ॥

সব কথা সব কথার শেষে এক হয়ে যাক মিলিয়ে এসে।

স্তব্ধ বাণীর হৃদয় মাঝে গভীর বাণী আপনি বাজে,

সেই বাণীটি আমার কানে বোলো ॥

রাগ: ইমন-পূরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1328
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1921
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে;

আমি কুড়িয়ে নিয়েছি, তোমার চরণে দিয়েছি--

লহো লহো করুণ করে॥

যখন যাব চলে ওরা ফুটবে তোমার কোলে,

তোমার মালা গাঁথার আঙুলগুলি মধুর বেদনভরে

যেন আমায় স্মরণ করে॥

বউকথাকও তন্দ্রাহারা বিফল ব্যথায় ডাক দিয়ে হয় সারা

আজি বিভোর রাতে।

দুজনের কানাকানি কথা দুজনের মিলনবিহ্বলতা,

জ্যোৎস্নাধারায় যায় ভেসে যায় দোলের পূর্ণিমাতে।

এই আভাসগুলি পড়বে মালায় গাঁথা কালকে দিনের তরে

তোমার অলস দ্বিপ্রহরে॥

রাগ: ইমন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): মার্চ, ১৯৩৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
============================================
একি এ সুন্দর শোভা! কী মুখ হেরি এ!

আজি মোর ঘরে আইল হৃদয়নাথ,

প্রেম-উৎস উথলিল আজি ॥

বলো হে প্রেমময় হৃদয়ের স্বামী,

কী ধন তোমারে দিব উপহার।

হৃদয় প্রাণ লহো লহো তুমি, কী বলিব--

যাহা-কিছু আছে মম সকলই লও হে নাথ ॥

রাগ: ইমন-ভূপালী
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1287
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1881
স্বরলিপিকার: প্রতিভা দেবী, কাঙ্গালীচরণ সেন
============================================
বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা ॥

বাজে অসীম নভোমাঝে অনাদি রব,

জাগে অগণ্য রবিচন্দ্রতারা ॥

একক অখণ্ড ব্রহ্মাণ্ডরাজ্যে

পরম-এক সেই রাজরাজেন্দ্র রাজে।

বিস্মিত নিমেষহত বিশ্ব চরণে বিনত,

লক্ষশত ভক্তচিত বাক্যহারা ॥


রাগ: লচ্ছাসার বিলাবল
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ভাদ্র, ১৩০৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1897
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন
==========================================
অচেনাকে ভয় কী আমার ওরে?

অচেনাকেই চিনে চিনে উঠবে জীবন ভরে ॥

জানি জানি আমার চেনা কোনো কালেই ফুরাবে না,

চিহ্নহারা পথে আমায় টানবে অচিন ডোরে ॥

ছিল আমার মা অচেনা, নিল আমায় কোলে।

সকল প্রেমই অচেনা গো, তাই তো হৃদয় দোলে।

অচেনা এই ভুবন মাঝে কত সুরেই হৃদয় বাজে--

অচেনা এই জীবন আমার,

বেড়াই তারি ঘোরে ॥

রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৩ আশ্বিন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১০ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: বুদ্ধগয়া
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
================================================

চক্ষে আমার তৃষ্ণা, 
ওগো তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে।

আমি বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন, 
সন্তাপে প্রাণ যায় যে পুড়ে॥

ঝড় উঠেছে তপ্ত হাওয়ায়, 
মনকে সুদূর শূন্যে ধাওয়ায়--

অবগুণ্ঠন যায় যে উড়ে॥

যে-ফুল কানন করত আলো

কালো হয়ে সে শুকাল।

ঝরনারে কে দিল বাধা-- নিষ্ঠুর পাষাণে বাঁধা

দুঃখের শিখরচূড়ে॥

রাগ: বৃন্দাবনী সারং-আড়ানা
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ভাদ্র, ১৩৪৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1938
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
আজি হৃদয় আমার যায় যে ভেসে

যার পায় নি দেখা তার উদ্দেশে॥

বাঁধন ভোলে, হাওয়ায় দোলে, যায় সে বাদল-মেঘের কোলে রে

কোন্‌-সে অসম্ভবের দেশে॥

সেথায় বিজন সাগরকূলে

শ্রাবণ ঘনায় শৈলমূলে।

রাজার পুরে তমালগাছে নূপুর শুনে ময়ূর নাচে রে

সুদূর তেপান্তরের শেষে॥

রাগ: ইমন-পূরবী
তাল: দাদরা-খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): শ্রাবণ, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1922
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================

No comments:

Post a Comment