Wednesday 21 August 2013



বঁধু, কোন্‌ আলো লাগল চোখে!


বুঝি দীপ্তিরূপে ছিলে সূর্যলোকে!



ছিল মন তোমারি প্রতীক্ষা করি

যুগে যুগে দিন রাত্রি ধরি,

ছিল মর্মবেদনাঘন অন্ধকারে,

জন্ম-জনম গেল বিরহশোকে।

অস্ফুটমঞ্জরী কুঞ্জবনে,

সংগীতশূন্য বিষণ্ন মনে

সঙ্গীরিক্ত চিরদুঃখরাতি

পোহাব কি নির্জনে শয়ন পাতি!

সুন্দর হে, সুন্দর হে,

বরমাল্যখানি তব আনো বহে,

অবগুণ্ঠনছায়া ঘুচায়ে দিয়ে

হেরো লজ্জিত স্মিতমুখ শুভ আলোকে॥

রাগ: ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ আশ্বিন, ১৩৪১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪
স্বরলিপিকার: শান্তিদেব ঘোষ
=========================================
মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরে

একেলা রয়েছ নীরব শয়ন-'পরে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥

রুদ্ধ দ্বারের বাহিরে দাঁড়ায়ে আমি

আর কতকাল এমনে কাটিবে স্বামী--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥

রজনীর তারা উঠেছে গগন ছেয়ে,

আছে সবে মোর বাতায়ন পানে চেয়ে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো।

জীবনে আমার সঙ্গীত দাও আনি,

নীরব রেখো না তোমার বীণার বাণী--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥

মিলাব নয়ন তব নয়নের সাথে,

মিলাব এ হাত তব দক্ষিণহাতে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো।

হৃদয়পাত্র সুধায় পূর্ণ হবে,

তিমির কাঁপিবে গভীর আলোর রবে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥


রাগ: বেহাগ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: সুরুল
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
============================================
সুরের গুরু, দাও গো সুরের দীক্ষা---

মোরা সুরের কাঙাল, এই আমাদের ভিক্ষা।।

মন্দাকিনীর ধারা, ঊষার শুকতারা,

কনকচাঁপা কানে কানে যে সুর পেল শিক্ষা।।

তোমার সুরে ভরিয়ে নিয়ে চিত্ত

যাব যেথায় বেসুর বাজে নিত্য।

কোলাহলের বেগে ঘূর্ণি উঠে জেগে,

নিয়ো তুমি আমার বীণার সেইখানেই পরীক্ষা।।
========================================
গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ আমার মন ভুলায় রে।

ওরে কার পানে মন হাত বাড়িয়ে লুটিয়ে যায় ধুলায় রে॥

ও যে আমায় ঘরের বাহির করে, পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে--

ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে যায় রে কোন্‌ চুলায় রে।

ও যে কোন্‌ বাঁকে কী ধন দেখাবে, কোন্‌খানে কী দায় ঠেকাবে--

কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে ভেবেই না কুলায় রে॥


রাগ: বাউল
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1316
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1909
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
==========================================
এমন হাওয়ার মুখে ভাসল তরী,

কূলে ভিড়ব না আর, ভিড়ব না রে॥

ছড়িয়ে গেছে সুতো ছিঁড়ে, তাই খুঁটে আজ মরব কি রে--

এখন ভাঙা ঘরের কুড়িয়ে খুঁটি

বেড়া ঘিরব না আর, ঘিরব না রে॥

ঘাটের রশি গেছে কেটে, কাঁদব কি তাই বক্ষ ফেটে--

এখন পালের রশি ধরব কষি,

এ রশি ছিঁড়ব না আর ছিঁড়ব না রে!

রাগ: খাম্বাজ-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1316
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1909
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
========================================
সুখের মাঝে তোমায় দেখেছি,

দুঃখে তোমায় পেয়েছি প্রাণ ভ'রে।

হারিয়ে তোমায় গোপন রেখেছি,

পেয়ে আবার হারাই মিলন-ঘোরে।

চিরজীবন আমার বীণা-তারে

তোমার আঘাত লাগল বারে বারে,

তাই তো আমার নানা সুরের তানে

তোমার পরশ প্রাণে নিলেম ধ'রে।

আজ তো আমি ভয় করি নে আর

লীলা যদি ফুরায় হেথাকার।

নূতন আলোয় নূতন অন্ধকারে

লও যদি বা নূতন সিন্ধুপারে

তবু তুমি সেই তো আমার তুমি,

আবার তোমায় চিনব নূতন ক'রে।
==========================================
যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক, আমি তোমায় ছাড়ব না মা!

আমি তোমার চরণ--

মা গো, আমি তোমার চরণ করব শরণ, আর কারো ধার ধারব না মা ॥

কে বলে তোর দরিদ্র ঘর, হৃদয় তোর রতনরাশি--

আমি জানি গো তার মূল্য জানি, পরের আদর কাড়ব না মা ॥

মানের আশে দেশবিদেশে যে মরে সে মরুক ঘুরে--

তোমার ছেঁড়া কাঁথা আছে পাতা, ভুলতে সে যে পারব না মা!

ধনে মানে লোকের টানে ভুলিয়ে নিতে চায় যে আমায়--

ও মা, ভয় যে জাগে শিয়র-বাগে,কারো কাছেই হারব না মা ॥

রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1312
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1905
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
========================================
ওরা অকারণে চঞ্চল।

ডালে ডালে দোলে বায়ুহিল্লোলে নব পল্লবদল॥

ছড়ায়ে ছড়ায়ে ঝিকিমিকি আলো

দিকে দিকে ওরা কী খেলা খেলালো,

মর্মরতানে প্রাণে ওরা আনে কৈশোরকোলাহাল॥

ওরা কান পেতে শোনে গগনে গগনে

নীরবের কানাকানি,

নীলিমার কোন্‌ বাণী।

ওরা প্রাণঝরনার উচ্ছল ধার, ঝরিয়া ঝরিয়া বহে অনিবার,

চির তাপসিনী ধরণীর ওরা শ্যামশিখা হোমানল॥

রাগ: কীর্তন
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৩৭
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): মার্চ, ১৯৩১
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
==========================================
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে

আমার নামটি লিখো-- তোমার

মনের মন্দিরে।

আমার পরানে যে গান বাজিছে

তাহার তালটি শিখো-- তোমার

চরণমঞ্জীরে॥

ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে

আমার মুখর পাখি-- তোমার

প্রাসাদপ্রাঙ্গণে॥

মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো

আমার হাতের রাখী-- তোমার

কনককঙ্কণে॥

আমার লতার একটি মুকুল

ভুলিয়া তুলিয়া রেখো-- তোমার

অলকবন্ধনে।

আমার স্মরণ শুভ-সিন্দুরে

একটি বিন্দু এঁকো-- তোমার

ললাটচন্দনে।

আমার মনের মোহের মাধুরী

মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-- তোমার

অঙ্গসৌরভে।

আমার আকুল জীবনমরণ

টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো-- তোমার

অতুল গৌরবে॥


রাগ: কীর্তন
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৮ আশ্বিন, ১৩০৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1897
রচনাস্থান: সাজাদপুর
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
=============================================
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা--

আন্‌মনা যেন দিক্‌বালিকার ভাসানো মেঘের ভেলা ॥

যেমন হেলায় অলস ছন্দে কোন্‌ খেয়ালির কোন্‌ আনন্দে

সকালে-ধরানো আমের মুকুল ঝরানো বিকালবেলা ॥

যে বাতাস নেয় ফুলের গন্ধ, ভুলে যায় দিনশেষে,

তার হাতে দিই আমার ছন্দ-- কোথা যায় কে জানে সে।

লক্ষ্যবিহীন স্রোতের ধারায় জেনো জেনো মোর সকলই হারায়,

চিরদিন আমি পথের নেশায় পাথেয় করেছি হেলা ॥


রাগ: ঝিঁঝিট
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২১ ফাল্গুন, ১৩৩৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৫ মার্চ, ১৯২৭
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=============================================
মায়াবনবিহারিণী হরিণী

গহনস্বপনসঞ্চারিণী,

কেন তারে ধরিবারে করি পণ

অকারণ।

থাক্‌ থাক্‌, নিজ-মনে দূরেতে,

আমি শুধু বাঁশরির সুরেতে

পরশ করিব ওর প্রাণমন

অকারণ॥



চমকিবে ফাগুনের পবনে,

পশিবে আকাশবাণী শ্রবণে,

চিত্ত আকুল হবে অনুখন

অকারণ।

দূর হতে আমি তারে সাধিব,

গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব--

বাঁধনবিহীন সেই যে বাঁধন

অকারণ॥

রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১২ আশ্বিন, ১৩৪১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: সুশীলকুমার ভঞ্জচৌধুরী
==========================================
এসো আমার ঘরে।

বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছ অন্তরে॥

স্বপনদুয়ার খুলে এসো অরুণ-আলোকে

মুগ্ধ এ চোখে।

ক্ষণকালের আভাস হতে চিরকালের তরে এসে আমার ঘরে॥

দুঃখসুখের দোলে এসো, প্রাণের হিল্লোলে এসো।

ছিলে আশার অরূপ বাণী ফাগুনবাতাসে

বনের আকুল নিশ্বাসে--

এবার ফুলের প্রফুল্ল রূপ এসো বুকের 'পরে॥
রাগ: দেশ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৩২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1926
=======================================
আমার মল্লিকাবনে যখন প্রথম ধরেছে কলি

তোমার লাগিয়া তখনি, বন্ধু, বেঁধেছিনু অঞ্জলি॥

তখনো কুহেলীজালে,

সখা, তরুণী উষার ভালে

শিশিরে শিশিরে অরুণমালিকা উঠিতেছে ছলোছলি॥

এখনো বনের গান, বন্ধু হয় নি তো অবসান--

তবু এখনি যাবে কি চলি।

ও মোর করুণ বল্লিকা,

ও তোর শ্রান্ত মল্লিকা

ঝরো-ঝরো হল, এই বেলা তোর শেষ কথা দিস বলি॥


রাগ: কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1337
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1931
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
=======================================
গোধূলিগগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা।

আমার যা কথা ছিল হয়ে গেল সারা ॥

হয়তো সে তুমি শোন নাই, সহজে বিদায় দিলে তাই--

আকাশ মুখর ছিল যে তখন, ঝরোঝরো বারিধারা ॥

চেয়েছিনু যবে মুখে তোলো নাই আঁখি,

আঁধারে নীরব ব্যথা দিয়েছিল ঢাকি।

আর কি কখনো কবে এমন সন্ধ্যা হবে--

জনমের মতো হায় হয়ে গেল হারা ॥

রাগ: ছায়ানট-কেদারা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1344
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1937
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
=========================================
গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে

রুদ্ধবাণীর অন্ধকারে কাঁদন জেগে উঠে ॥

বিশ্বকবির চিত্তমাঝে ভুবনবীণা যেথায় বাজে

জীবন তোমার সুরের ধারায় পড়ুক সেথায় লুটে ॥

ছন্দ তোমার ভেঙে গিয়ে দ্বন্দ্ব বাধায় প্রাণে,

অন্তরে আর বাহিরে তাই তান মেলে না তানে।

সুরহারা প্রাণ বিষম বাধা-- সেই তো আঁধি, সেই তো ধাঁধা--

গান-ভোলা তুই গান ফিরে নে, যাক সে আপদ ছুটে ॥

রাগ: আশাবরী-ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৮ আশ্বিন, ১৩৩৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯২৬
রচনাস্থান: ডুসেলডর্ফ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===========================================
আজ ধানের খেতে রৌদ্রছায়ায়

লুকোচুরি খেলা।

নীল আকশে কে ভাসালে

সাদা মেঘের ভেলা।

আজ ভ্রমর ভোলে মধু খেতে,

উড়ে বেড়ায় আলোয় মেতে;

আজ কিসের তরে নদীর চরে

চখাচখির মেলা।



ওরে যাব না আজ ঘরে রে ভাই,

যাব না আজ ঘরে।

ওরে আকাশ ভেঙে বাহিরকে আজ

নেব রে লুঠ করে।

যেন জোয়ার-জলে ফেনার রাশি

বাতাসে আজ ছুটছে হাসি।

আজ বিনা কাজে বাজিয়ে বাঁশি

কাটবে সকল বেলা।
=========================================
এমন দিনে তারে বলা যায়

এমন ঘনঘোর বরিষায়।

এমন দিনে মন খোলা যায়--

এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে

তপনহীন ঘন তমসায়॥

সে কথা শুনিবে না কেহ আর,

নিভৃত নির্জন চারি ধার।

দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,

আকাশে জল ঝরে অনিবার--

জগতে কেহ যেন নাহি আর॥

সমাজ সংসার মিছে সব,

মিছে এ জীবনের কলরব।

কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে

হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব--

আঁধারে মিশে গেছে আর সব॥

তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার

নামাতে পারি যদি মনোভার।

শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে

দু কথা বলি যদি কাছে তার

তাহাতে আসে যাবে কিবা কার॥

ব্যাকুল বেগে আজি বহে যায়,

বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।

যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে

সে কথা আজি যেন বলা যায়--

এমন ঘনঘোর বরিষায়॥


রাগ: দেশ
তাল: রূপক
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১২৯৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৭ মে, ১৮৮৯
রচনাস্থান: খিরকী, পুনে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
ফুলে ফুলে ঢ'লে ঢ'লে বহে কিবা মৃদু বায়,

তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়

পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে কুহূ কুহূ কুহূ গায়,

কি জানি কিসেরি লাগি প্রাণ করে হায় হায়!


রাগ: বিলাতি ভাঙা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1289
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1882
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী
=========================================
এখনো বনের গান, বন্ধু হয় নি তো অবসান--

তবু এখনি যাবে কি চলি।

ও মোর করুণ বল্লিকা,

ও তোর শ্রান্ত মল্লিকা

ঝরো-ঝরো হল, এই বেলা তোর শেষ কথা দিস বলি॥
=========================================
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেনঃ 

আমাকে যাহারা চেনে সকলেই তো আমার নাম ধরিয়া ডাকে,
 কিন্তু সকলেই কিছু একই ব্যক্তিকে ডাকে না,
 এবং সকলকেই কিছু একই ব্যক্তি সাড়া দেয় না।
 এক-একজনে আমার এক-একটা অংশকে ডাকে মাত্র, 
আমাকে তাহারা ততটুকু বলিয়াই জানে। 
এইজন্য আমরা যাহারা ভালোবাসি তাহার একটা নূতন নামকরণ করিতে চাই;
 কারণ সকলের সে ও আমার-সে বিস্তর প্রভেদ।
========================================
মায়াবনবিহারিণী হরিণী

গহনস্বপনসঞ্চারিণী,

কেন তারে ধরিবারে করি পণ

অকারণ।

থাক্‌ থাক্‌, নিজ-মনে দূরেতে,

আমি শুধু বাঁশরির সুরেতে

পরশ করিব ওর প্রাণমন

অকারণ॥



চমকিবে ফাগুনের পবনে,

পশিবে আকাশবাণী শ্রবণে,

চিত্ত আকুল হবে অনুখন

অকারণ।

দূর হতে আমি তারে সাধিব,

গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব--

বাঁধনবিহীন সেই যে বাঁধন

অকারণ॥

রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১২ আশ্বিন, ১৩৪১
 রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪
 রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন স্বরলিপিকার: সুশীলকুমার ভঞ্জচৌধুরী
==============================================
প্রাণ চায় চক্ষু না চায়, মরি একি তোর দুস্তরলজ্জা।

সুন্দর এসে ফিরে যায়, তবে কার লাগি মিথ্যা এ সজ্জা॥

মুখে নাহি নিঃসরে ভাষ, দহে অন্তরে নির্বাক বহ্নি।

ওষ্ঠে কী নিষ্ঠুর হাস, তব মর্মে যে ক্রন্দন তন্বী!

মাল্য যে দংশিছে হায়, তব শয্যা যে কণ্টকশয্যা

মিলনসমুদ্রবেলায় চির- বিচ্ছেদজর্জর মজ্জা॥

রাগ: ভৈরবী-বাউল
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
======================================
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাই নি।

তোমায় দেখতে আমি পাই নি।

বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি ॥

আমার সকল ভালোবাসায় সকল আঘাত সকল আশায়

তুমি ছিলে আমার কাছে, তোমার কাছে যাই নি ॥

তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে আমার খেলায়--

আনন্দে তাই ভুলেছিলেম, কেটেছে দিন হেলায়।

গোপন রহি গভীর প্রাণে আমার দুঃখসুখের গানে

সুর দিয়েছ তুমি, আমি তোমার গান তো গাই নি ॥

রাগ: পিলু
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: কলকাতার পথে রেলগাড়িতে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=======================================
জানি নাই গো সাধন তোমার বলে কারে।

আমি ধুলায় বসে খেলেছি এই

তোমার দ্বারে ॥

অবোধ আমি ছিলেম বলে যেমন খুশি এলেম চলে,

ভয় করি নি তোমায় আমি অন্ধকারে ॥

তোমার জ্ঞানী আমায় বলে কঠিন তিরস্কারে,

"পথ দিয়ে তুই আসিস নি যে, ফিরে যা রে।'

ফেরার পন্থা বন্ধ করে আপনি বাঁধো বাহুর ডোরে,

ওরা আমায় মিথ্যা ডাকে বারে বারে ॥

রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৫ মার্চ, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================
নব আনন্দে জাগো আজি নবরবিকিরণে

শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে ॥

উৎসারিত নব জীবননির্ঝর উচ্ছ্বাসিত আশাগীতি,

অমৃতপুষ্পগন্ধ বহে আজি এই শান্তিপবনে ॥

রাগ: রামকেলী
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1296
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1890
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন
=========================================
ও যে সব চাওয়া দিতে চাহে অতলে জলাঞ্জলি॥

দুরাশার দুঃসহ ভার দিক নামায়ে,

যাক ভুলে অকিঞ্চন জীবনের বঞ্চনা ॥

আসুক নিবিড় নিদ্রা,

তামসী তুলিকায় অতীতের বিদ্রূপবাণী দিক মুছায়ে

স্মরণের পত্র হতে।

স্তব্ধ হোক বেদনগুঞ্জন

সুপ্ত বিহঙ্গের নীড়ের মতো--

আনো তমস্বিনী,

শ্রান্ত দুঃখের মৌনতিমিরে শান্তির দান॥

রাগ: কেদারা
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৯ ফাল্গুন, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৩ মার্চ, ১৯৩৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
============================================



No comments:

Post a Comment