Wednesday 21 August 2013


বহু যুগের ও পার হতে আষাঢ় এল আমার মনে,


কোন্‌ সে কবির ছন্দ বাজে ঝরো ঝরো বরিষনে॥



যে মিলনের মালাগুলি ধুলায় মিশে হল ধূলি

গন্ধ তারি ভেসে আসে আজি সজল সমীরণে॥

সে দিন এমনি মেঘের ঘটা রেবানদীর তীরে,

এমনি বারি ঝরেছিল শ্যামলশৈলশিরে।

মালবিকা অনিমিখে চেয়ে ছিল পথের দিকে,

সেই চাহনি এল ভেসে কালো মেঘের ছায়ার সনে॥

রাগ: কেদারা
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আষাঢ়, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1922
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=======================================
এসো শ্যামল সুন্দর,

আনো তব তাপহরা তৃষাহরা সঙ্গসুধা।

বিরহিণী চাহিয়া আছে আকাশে॥

সে যে ব্যথিত হৃদয় আছে বিছায়ে

তমালকুঞ্জপথে সজল ছায়াতে,

নয়নে জাগিছে করুণ রাগিণী॥

বকুলমুকুল রেখেছে গাঁথিয়া,

বাজিছে অঙ্গনে মিলনবাঁশরি।

আনো সাথে তোমার মন্দিরা

চঞ্চল নৃত্যের বাজিবে ছন্দে সে--

বাজিবে কঙ্কণ, বাজিবে কিঙ্কিণী,

ঝঙ্কারিবে মঞ্জীর রুণু রুণু॥

রাগ: দেশ
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1344
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1937
স্বরলিপিকার: শান্তিদেব ঘোষ
===========================================
যখন এসেছিলে অন্ধকারে

চাঁদ ওঠে নি সিন্ধুপারে॥

হে অজানা, তোমায় তবে জেনেছিলেম অনুভবে--

গানে তোমার পরশখানি বেজেছিল প্রাণের তারে॥

তুমি গেলে যখন একলা চলে

চাঁদ উঠেছে রাতের কোলে।

তখন দেখি, পথের কাছে মালা তোমার পড়ে আছে--

বুঝেছিলেম অনুমানে এ কণ্ঠহার দিলে কারে॥

রাগ: পিলু-বারোয়াঁ
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৬ পৌষ, ১৩৩০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১ জানুয়ারি, ১৯২৪
রচনাস্থান: শ্রীনিকেতন
=========================================
আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই, তুমি তাই গো।

তোমা ছাড়া আর এ জগতে মোর কেহ নাই কিছু নাই গো॥

তুমি সুখ যদি নাহি পাও, যাও সুখের সন্ধানে যাও--

আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে, আর কিছু নাহি চাই গো॥

আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস,

দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস।

যদি আর-কারে ভালোবাস, যদি আর ফিরে নাহি আস,

তবে, তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও, আমি যত দুখ পাই গো॥

রাগ: পিলু
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
==============================================
যদি তোর ভাবনা থাকে ফিরে যা-না। তবে তুই ফিরে যা-না।

যদি তোর ভয় থাকে তো করি মানা ॥

যদি তোর ঘুম জড়িয়ে থাকে গায়ে ভুলবি যে পথ পায়ে পায়ে,

যদি তোর হাত কাঁপে তো নিবিয়ে আলো সবারে করবি কানা ॥

যদি তোর ছাড়তে কিছু না চাহে মন করিস ভারী বোঝা আপন--

তবে তুই সইতে কভু পারবি নে রে এ বিষম পথের টানা ॥

যদি তোর আপনা হতে অকারণে সুখ সদা না জাগে মনে

তবে তুই তর্ক ক'রে সকল কথা করিবি নানাখানা ॥

রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1312
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1905
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
========================================
দে তোরা আমায় নূতন ক'রে দে নূতন আভরণে॥

হেমন্তের অভিসম্পাতে রিক্ত অকিঞ্চন কাননভূমি,

বসন্তে হোক দৈন্যবিমোচন নব লাবণ্যধনে।

শূন্য শাখা লজ্জা ভুলে যাক পল্লব-আবরণে॥

বাজুক প্রেমের মায়ামন্ত্রে

পুলকিত প্রাণের বীণাযন্ত্রে

চিরসুন্দরের অভিবন্দনা।

আনন্দচঞ্চল নৃত্য অঙ্গে অঙ্গে বহে যাক হিল্লোলে হিল্লোলে,

যৌবন পাক সম্মান বাঞ্ছিতসম্মিলনে॥

রাগ: ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন ১৩৪২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
===========================================
গহন ঘন ছাইল গগন ঘনাইয়া।

স্তিমিত দশ দিশি, স্তম্ভিত কানন,

সব চরাচর আকুল-- কী হবে কে জানে

ঘোরা রজনী, দিকললনা ভয়বিভলা ॥

চমকে চমকে সহসা দিক উজলি

চকিতে চকিতে মাতি ছুটিল বিজলি

থরথর চরাচর পলকে ঝলকিয়া

ঘোর তিমিরে ছায় গগন মেদিনী

গুরুগুরু নীরদগরজনে স্তব্ধ আঁধার ঘুমাইছে,

সহসা উঠিল জেগে প্রচণ্ড সমীরণ-- কড়কড় বাজ॥

রাগ: মেঘমল্লার
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1289
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1882
==========================================
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।

ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।

আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।

মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।

মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়--

বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।

হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়--

আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়॥


রাগ: মিশ্র ভূপালী-বিলাতি ভাঙা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
===========================================
আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী।

তুমি থাক সিন্ধুপারে ওগো বিদেশিনী॥

তোমায় দেখেছি শারদপ্রাতে, তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে,

তোমায় দেখেছি হৃদি-মাঝারে ওগো বিদেশিনী।

আমি আকাশে পাতিয়া কান শুনেছি শুনেছি তোমারি গান,

আমি তোমারে সঁপেছি প্রাণ ওগো বিদেশিনী।

ভুবন ভ্রমিয়া শেষে আমি এসেছি নূতন দেশে,

আমি অতিথি তোমারি দ্বারে ওগো বিদেশিনী॥

রাগ: খাম্বাজ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ আশ্বিন, ১৩০২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1895
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সরলা দেবী
==========================================
এবার অবগুণ্ঠন খোলো।

গহন মেঘমায়ায় বিজন বনছায়ায়

তোমার আলসে অবলুণ্ঠন সারা হল॥

শিউলিসুরভি রাতে বিকশিত জ্যোৎস্নাতে

মৃদু মর্মরগানে তব মর্মের বাণী বোলো ॥

বিষাদ-অশ্রুজলে মিলুক শরমহাসি--

মালতীবিতানতলে বাজুক বঁধুর বাঁশি।

শিশিরসিক্ত বায়ে বিজড়িত আলোছায়ে

বিরহ-মিলনে-গাঁথা নব প্রণয়দোলায় দোলো ॥

রাগ: দেশ-মল্লার
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৩০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1924
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
=========================================
বাধা দিলে বাধবে লড়াই, মরতে হবে।

পথ জুড়ে কী করবি বড়াই, সরতে হবে॥

লুঠ-করা ধন ক'রে জড়ো কে হতে চাস সবার বড়ো--

এক নিমেষে পথের ধুলায় পড়তে হবে।

নাড়া দিতে গিয়ে তোমায় নড়তে হবে॥

নীচে বসে আছিস কে রে, কাঁদিস কেন?

লজ্জা-ডোরে আপনাকে রে বাঁধিস কেন।

ধনী যে তুই দুঃখধনে সেই কথাটি রাখিস মনে--

ধুলার 'পরে স্বর্গ তোমায় গড়তে হবে--

বিনা অস্ত্র, বিনা সহায়, লড়তে হবে॥

রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৪ ভাদ্র, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২১ অগাস্ট, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।

তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে

তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ॥

হাসিকান্না হীরাপান্না দোলে ভালে,

কাঁপে ছন্দে ভালোমন্দ তালে তালে,

নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু পাছে পাছে,

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।

কী আনন্দ, কী আনন্দ, কী আনন্দ

দিবারাত্রি নাচে মুক্তি নাচে বন্ধ--

সে তরঙ্গে ছুটি রঙ্গে পাছে পাছে

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ॥

রাগ: কাফি
তাল: খেমটা-ষষ্ঠী
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
=========================================
সখী, বহে গেল বেলা, শুধু হাসিখেলা,

এ কি আর ভালো লাগে!

আকুল তিয়াষ, প্রেমের পিয়াস,

প্রাণে কেন নাহি জাগে!

কবে আর হবে থাকিতে জীবন

আঁখিতে আঁখিতে মদির মিলন,

মধুর হুতাশে মধুর দহন,

নিত-নব অনুরাগে।

তরল কোমল নয়নের জল

নয়নে উঠিবে ভাসি।

সে বিষাদ-নীরে নিবে যাবে ধীরে

প্রখর চপল হাসি।

উদাস নিশ্বাস আকুলি উঠিবে,

আশা-নিরাশায় পরান টুটিবে,

মরমের আলো কপোলে ফুটিবে,

শরম-অরুণ-রাগে।

রাগ: বিলাবল-কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================
আমার মনের মাঝে যে গান বাজে শুনতে কি পাও গো

আমার চোখের 'পরে আভাস দিয়ে যখনি যাও গো ॥

রবির কিরণ নেয় যে টানি ফুলের বুকের শিশিরখানি,

আমার প্রাণের সে গান তুমি তেমনি কি নাও গো ॥

আমার উদাস হৃদয় যখন আসে বাহির-পানে

আপনাকে যে দেয় ধরা সে সকলখানে।

কচি পাতা প্রথম প্রাতে কী কথা কয় আলোর সাথে,

আমার মনের আপন কথা বলে যে তাও গো ॥
রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা বা খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1328
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1921
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
গান আমার যায় ভেসে যায়----

চাস্‌ নে ফিরে, দে তারে বিদায়॥

সে যে দখিনহাওয়ায় মুকুল ঝরা, ধুলার আঁচল হেলায় ভরা,

সে যে শিশির-ফোঁটার মালা গাঁথা বনের আঙিনায়॥

কাঁদন-হাসির আলোছায়া সারা অলস বেলা--

মেঘের গায়ে রঙের মায়া, খেলার পরে খেলা।

ভুলে-যাওয়ার বোঝাই ভরি গেল চলে কতই তরী--

উজান বায়ে ফেরে যদি কে রয় সে আশায়॥

রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৮ আষাঢ়, ১৩৩২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২ জুলাই, ১৯২৫
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
=======================================
একি আকুলতা ভুবনে! একি চঞ্চলতা পবনে॥

একি মধুরমদির রসরাশি আজি শূন্যতলে চলে ভাসি,

ঝরে চন্দ্রকরে একি হাসি, ফুল- গন্ধ লুটে গগনে॥

একি প্রাণভরা অনুরাগে আজি বিশ্বজগতজন জাগে,

আজি নিখিল নীলগগনে সুখ- পরশ কোথা হতে লাগে।

সুখে শিহরে সকল বনরাজি, উঠে মোহনবাঁশরি বাজি,

হেরো পূর্ণবিকশিত আজি মম অন্তর সুন্দর স্বপনে॥

রাগ: বাহার
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৬ কার্তিক, ১৩০২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1895
রচনাস্থান: জোড়াসাঁকো
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী


===========================================

No comments:

Post a Comment