Wednesday 21 August 2013


আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান--
তুমি জান নাই, তুমি জান নাই,
তুমি জান নাই তার মূল্যের পরিমাণ॥
রজনীগন্ধা অগোচরে
যেমন রজনী স্বপনে ভরে সৌরভে,
তুমি জান নাই, তুমি জান নাই,
তুমি জান নাই, মরমে আমার ঢেলেছ তোমার গান॥
বিদায় নেবার সময় এবার হল--
প্রসন্ন মুখ তোলো, মুখ তোলো, মুখ তোলো--
মধুর মরণে পূর্ণ করিয়া সঁপিয়া যাব প্রাণ চরণে।
যারে জান নাই, যারে জান নাই, যারে জান নাই,
তার গোপন ব্যথার নীরব রাত্রি হোক আজি অবসান ॥ 
==========================================
তারে দেখাতে পারি নে কেন প্রাণ খুলে গো।
কেন বুঝাতে পারি নে হৃদয়বেদনা।।
কেমনে সে হেসে চলে যায়,
কোন্‌ প্রাণে ফিরেও না চায়,
এত সাধ এত প্রেম করে অপমান।।
এত ব্যথাভরা ভালোবাসা কেহ দেখে না-
প্রাণে গোপনে রহিল।
এ প্রেম কুসুম যদি হত
প্রাণ হতে ছিঁড়ে লইতাম,
তার চরণে করিতাম দান।
বুঝি সে নিত না, শুকাত অনাদরে-
তবু তার সংশয় হত অবসান।।
==========================================
মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই।

ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই॥

চলে যায় দিন, যতখন আছি পথে যেতে যদি আসি কাছাকাছি

তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই--

তাই অকারণে গান গাই॥

ফাগুনের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুনের অবসানে--

ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া, আর কিছু নাহি জানে।

ফুরাইবে দিন, আলো হবে ক্ষীণ, গান সারা হবে, থেমে যাবে বীন,

যতখন থাকি ভরে দিবে না কি এ খেলারই ভেলাটাই--

তাই অকারণে গান গাই॥


রাগ: খাম্বাজ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৯ ফাল্গুন, ১৩৩৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ মার্চ, ১৯২৭
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===========================================
তারে দেখাতে পারি নে কেন প্রাণ খুলে গো।
কেন বুঝাতে পারি নে হৃদয়বেদনা।।
কেমনে সে হেসে চলে যায়,
কোন্‌ প্রাণে ফিরেও না চায়,
এত সাধ এত প্রেম করে অপমান।।
এত ব্যথাভরা ভালোবাসা কেহ দেখে না-
প্রাণে গোপনে রহিল।
এ প্রেম কুসুম যদি হত
প্রাণ হতে ছিঁড়ে লইতাম,
তার চরণে করিতাম দান।
বুঝি সে নিত না, শুকাত অনাদরে-
তবু তার সংশয় হত অবসান।।
========================================
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে

আমার নামটি লিখো-- তোমার

মনের মন্দিরে।

আমার পরানে যে গান বাজিছে

তাহার তালটি শিখো-- তোমার

চরণমঞ্জীরে॥

ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে

আমার মুখর পাখি-- তোমার

প্রাসাদপ্রাঙ্গণে॥

মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো

আমার হাতের রাখী-- তোমার

কনককঙ্কণে॥

আমার লতার একটি মুকুল

ভুলিয়া তুলিয়া রেখো-- তোমার

অলকবন্ধনে।

আমার স্মরণ শুভ-সিন্দুরে

একটি বিন্দু এঁকো-- তোমার

ললাটচন্দনে।

আমার মনের মোহের মাধুরী

মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-- তোমার

অঙ্গসৌরভে।

আমার আকুল জীবনমরণ

টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো-- তোমার

অতুল গৌরবে॥


রাগ: কীর্তন
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৮ আশ্বিন, ১৩০৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1897
রচনাস্থান: সাজাদপুর
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
=============================================
ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু,

পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু॥

এই-যে হিয়া থরোথরো কাঁপে আজি এমনতরো

এই বেদনা ক্ষমা করো, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো প্রভু ॥

এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু,

পিছন-পানে তাকাই যদি কভু।

দিনের তাপে রৌদ্রজ্বালায় শুকায় মালা পূজার থালায়,

সেই ম্লানতা ক্ষমা করো, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো প্রভু ॥


রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৬ আশ্বিন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===========================================
প্রভাতে বিমল আনন্দে বিকশিত কুসুমগন্ধে

বিহঙ্গমগীতছন্দে তোমার আভাস পাই ॥

জাগে বিশ্ব তব ভবনে প্রতিদিন নব জীবনে,

অগাধ শূন্য পূরে কিরণে,

খচিত নিখিল বিচিত্র বরনে--

বিরল আসনে বসি তুমি সব দেখিছ চাহি ॥

চারি দিকে কর খেলা বরন-কিরণ-জীবন-মেলা,

কোথা তুমি অন্তরালে!

অন্ত কোথায়, অন্ত কোথায়-- অন্ত তোমার নাহি নাহি ॥


রাগ: গুর্জরী তোড়ি
তাল: চৌতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1293
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1887
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন
==============================================
আজি মেঘ কেটে গেছে সকালবেলায়,

এসো এসো এসো তোমার হাসিমুখে--

এসো আমার অলস দিনের খেলায়॥

স্বপ্ন যত জমেছিল আশা-নিরাশায়

তরুণ প্রাণের বিফল ভালোবাসায়

দিব অকূল-পানে ভাসায়ে ভাঁটার গাঙের ভেলায়।

দুঃখসুখের বাঁধন তারি গ্রন্থি দিব খুলে,

আজি ক্ষণেক-তরে মোরা রব আপন ভুলে।

যে গান হয় নি গাওয়া যে দান হয় নি পাওয়া--

আজি পূরব-হাওয়ায় তারি পরিতাপ

উড়াব অবহেলায়॥


রাগ: আলাহিয়া বিলাবল
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
=========================================
তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে।

এসো গন্ধে বরনে, এসো গানে।

এসো অঙ্গে পুলকময় পরশে,

এসো চিত্তে অমৃতময় হরষে,

এসো মুগ্ধ মুদিত দু নয়ানে॥

এসো নির্মল উজ্জ্বল কান্ত,

এসো সুন্দর স্নিগ্ধ প্রশান্ত,

এসো এসো হে বিচিত্র বিধানে।

এসো দু:খে সুখে, এসো মর্মে,

এসো নিত্য নিত্য সব কর্মে;

এসো সকল-কর্ম-অবসানে॥

রাগ: রামকেলী
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৬ ভাদ্র, ১৩০১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১০ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
রচনাস্থান: পতিসর
=========================================
ওগো নদী, আপন বেগে পাগল-পারা,

আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু গন্ধভরে তন্দ্রাহারা॥

আমি সদা অচল থাকি, গভীর চলা গোপন রাখি, 

আমার চলা নবীন পাতায়, আমার চলা ফুলের ধারা॥

ওগো নদী, চলার বেগে পাগল-পারা,

পথে পথে বাহির হয়ে আপন-হারা--

আমার চলা যায় না বলা-- আলোর পানে প্রাণের চলা--

আকাশ বোঝে আনন্দ তার, বোঝে নিশার নীরব তারা॥

রাগ: পিলু
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৩ ফাল্গুন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ মার্চ, ১৯১৫
রচনাস্থান: বোলপুর থেকে কলকাতা যাবার পথে ট্রেনে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
=============================================
আজি বরিষনমুখরিত শ্রাবণরাতি,

স্মৃতিবেদনার মালা একেলা গাঁথি॥

আজি কোন্‌ ভুলে ভুলি আঁধার ঘরেতে রাখি দুয়ার খুলি,

মনে হয় বুঝি আসিছে সে মোর দুখরজনীর সাথি॥

আসিছে সে ধারাজলে সুর লাগায়ে,

নীপবনে পুলক জাগায়ে।

যদিও বা নাহি আসে তবু বৃথা আশ্বাসে

ধুলি-'পরে রাখিব রে মিলন-আসনখানি পাতি॥

রাগ: পঞ্চম
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২১ শ্রাবণ, ১৩৪২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৬ অগাস্ট, ১৯৩৫
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
==========================================
মুখখানি কর মলিন বিধুর যাবার বেলা--

জানি আমি জানি, সে তব মধুর ছলের খেলা ॥

গোপন চিহ্ন এঁকে যাবে তব রথে--

জানি তুমি তারে ভুলিবে না কোনোমতে

যার সাথে তব হল এক দিন মিলনমেলা ॥

জানি আমি যবে আঁখিজল ভরে রসের স্নানে

মিলনের বীজ অঙ্কুর ধরে নবীন প্রাণে।

খনে খনে এই চিরবিরহের ভান,

খনে খনে এই ভয়রোমাঞ্চদান--

তোমার প্রণয়ে সত্য সোহাগে মিথ্যা হেলা ॥

রাগ: বেহাগ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২ চৈত্র, ১৩৩৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৬ মার্চ, ১৯২৭
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
==========================================
জানি তোমার অজানা নাহি গো কী আছে আমার মনে ।
আমি গোপন করিতে চাহি গো, ধরা পড়ে দুনয়নে ।।
কী বলিতে পাছে কী বলি
তাই দূরে চলে যাই কেবলি,
পথপাশে দিন বাহি গো-
তুমি দেখে যাও আঁখিকোণে কী আছে আমার মনে ।।
চির নিশীথতিমিরগহনে আছে মোর পূজাবেদী-
চকিত হাসির দহনে সে তিমির দাও ভেদি ।
বিজন দিবস-রাতিয়া
কাটে ধেয়ানের মালা গাঁথিয়া,
আনমনে গান গাহি গো-
তুমি শুনে যাও খনে খনে কী আছে আমার মনে ।।
===========================================
খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি আমার মনের ভিতরে ।
কত রাত তাই তো জেগেছি বলব কী তোরে ।।
প্রভাতে পথিক ডেকে যায়, অবসর পাই নে আমি হায়-
বাহিরের খেলায় ডাকে সে, যাব কী ক'রে ।।
যা আমার সবার হেলাফেলা যাচ্ছে ছড়াছড়ি
পুরোনো ভাঙা দিনের ঢেলা, তাই দিয়ে ঘর গড়ি ।
যে আমার নতুন খেলার জন তারি এই খেলার সিংহাসন,
ভাঙারে জোড়া দেবে সে কিসের মন্তরে ।।
===========================================
নিত্য তোমার যে ফুল ফোটে ফুলবনে

তারি মধু কেন মনমধুপে খাওয়াও না?

নিত্যসভা বসে তোমার প্রাঙ্গণে,

তোমার ভৃত্যের সেই সভায় কেন গাওয়াও না?।

বিশ্বকমল ফুটে চরণচুম্বনে,

সে যে তোমার মুখে মুখ তুলে চায় উন্মনে,

আমার চিত্ত-কমলটিরে সেই রসে

কেন তোমার পানে নিত্য-চাওয়া চাওয়াও না?।

আকাশে ধায় রবি-তারা-ইন্দুতে,

তোমার বিরামহারা নদীরা ধায় সিন্ধুতে,

তেমনি করে সুধাসাগর-সন্ধানে

আমার জীবনধারা নিত্য কেন ধাওয়াও না?

পাখির কণ্ঠে আপনি জাগাও আনন্দ,

তুমি ফুলের বক্ষে ভরিয়া দাও সুগন্ধ,

তেমনি করে আমার হৃদয়ভিক্ষুরে

কেন দ্বারে তোমার নিত্যপ্রসাদ পাওয়াও না?।
''

রাগ: ইমন-বাউল
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৯ আশ্বিন, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৫ অক্টোবর, ১৯১৩
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না?।

ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে

হারাই-হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে ॥

কী করিলে বলো পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে।

এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে?

আর কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আমি প্রাণপণ--

তুমি যদি বল এখনি করিব বিষয়বাসনা বিসর্জন ॥

রাগ: কাফি
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৯ মাঘ, ১২৯১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন
===========================================
আমার যে দিন ভেসে গেছে চোখের জলে

তারি ছায়া পড়েছে শ্রাবণগগনতলে॥

সে দিন যে রাগিণী গেছে থেমে, অতল বিরহে নেমে গেছে থেমে,

আজি পুবের হাওয়ায় হাওয়ায় হায় হায় হায় রে

কাঁপন ভেসে চলে॥

নিবিড় সুখে মধুর দুখে জড়িত ছিল সেই দিন--

দুই তারে জীবনের বাঁধা ছিল বীন।

তার ছিঁড়ে গেছে কবে একদিন কোন্‌ হাহারবে,

সুর হারায়ে গেল পলে পলে॥

রাগ: কালাংড়া-ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1344
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1937
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
===========================================
আমার ব্যথা যখন আনে আমায় তোমার দ্বারে
তখন আপনি এসে দ্বার খুলে দাও, ডাকো তারে ॥
বাহুপাশের কাঙাল সে যে, চলেছে তাই সকল ত্যেজে,
কাঁটার পথে ধায় সে তোমার অভিসারে ॥
আমার ব্যথা যখন বাজায় আমায় বাজি সুরে--
সেই গানের টানে পারো না আর রইতে দূরে।
লুটিয়ে পড়ে সে গান মম ঝড়ের রাতের পাখি-সম,
বাহির হয়ে এসো তুমি অন্ধকারে ॥
=========================================
নারে নারে হবেনা তোর স্বর্গ সাধন ।

সেইখানে যে মধুর বেশে হাত পেতে রয় সুখের বাঁধন ।
===========================================
এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার ?
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল কার ?
কাহার অভিষেকের তরে সোনার ঘটে আলোক ভরে
উষা কাহার আশিস বহি হল আঁধার পার ?
বনে বনে ফুল ফুটেছে, দোলে নবীন পাতা -----
কার হৃদয়ের মাঝে হল তাদের মালা গাঁথা ?
বহু যুগের উপহারে বরণ করি নিল কারে ,
কার জীবনে প্রভাত আজি ঘুচায় অন্ধকার ?
=============================================
চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো।

ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো ॥

পাগল হাওয়া বুঝতে নারে ডাক পড়েছে কোথায় তারে--

ফুলের বনে যার পাশে যায় তারেই লাগে ভালো ॥

নীল গগনের ললাটখানি চন্দনে আজ মাখা,

বাণীবনের হংসমিথুন মেলেছে আজ পাখা।

পারিজাতের কেশর নিয়ে ধরায়, শশী, ছড়াও কী এ।

ইন্দ্রপুরীর কোন্‌ রমণী বাসরপ্রদীপ জ্বালো ॥

রাগ: পিলু
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1336
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1929
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
না বুঝে কারে তুমি ভাসালে আঁখিজলে ।
ওগো, কে আছে চাহিয়া শূন্য পথপানে–
কাহার জীবনে নাহি সুখ, কাহার পরান জ্বলে ॥
পড় নি কাহার নয়নের ভাষা,
বোঝ নি কাহার মরমের আশা,
দেখ নি ফিরে–
কার ব্যাকুল প্রাণের সাধ এসেছ দলে ॥
=========================================
তোমায় নতুন করেই পাব বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণ
ও মোর ভালোবাসার ধন।
দেখা দেবে বলে তুমি হও যে অদর্শন,
ও মোর ভালোবাসার ধন॥
ওগো তুমি আমার নও আড়ালের, তুমি আমার চিরকালের--
ক্ষণকালের লীলার স্রোতে হও যে নিমগন,
ও মোর ভালোবাসার ধন॥
আমি তোমায় যখন খুঁজে ফিরি ভয়ে কাঁপে মন--
প্রেমে আমার ঢেউ লাগে তখন।
তোমার শেষ নাহি, তাই শূন্য সেজে শেষ করে দাও আপনাকে যে,
ওই হাসিরে দেয় ধুয়ে মোর বিরহের রোদন,
ও মোর ভালোবাসার ধন॥
===========================================
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেনঃ 
আমাকে যাহারা চেনে সকলেই তো আমার নাম ধরিয়া ডাকে,
 কিন্তু সকলেই কিছু একই ব্যক্তিকে ডাকে না,
 এবং সকলকেই কিছু একই ব্যক্তি সাড়া দেয় না।
 এক-একজনে আমার এক-একটা অংশকে ডাকে মাত্র,
 আমাকে তাহারা ততটুকু বলিয়াই জানে।
 এইজন্য আমরা যাহারা ভালোবাসি তাহার একটা নূতন নামকরণ করিতে চাই;
 কারণ সকলের সে ও আমার-সে বিস্তর প্রভেদ।
=============================================
আহা আজি এ বসন্তে
এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে
এত পাখি গায় আহা আজি এ বসন্তে।।

সখির হৃদয় কুসুম কোমল
আর অনাদরে আজি ঝড়ে যায়
কেন কাছে আস, কেন মিছে হাসো
কাছে যে আসে তো, সে তো আসিতে না চায়।।

সুখে আছে যারা সুখে থাক তারা
সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা
দুঃখিনী নারীর নয়নেরও নীড়
সুখি জনে যেন দেখিতে না পায়
তারা দেখেও দেখে না তারা বুঝেও বোঝেনা
তারা ফিরেও না চায়।।
==========================================
কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া

তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া

চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি

গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।

ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের দেবতা,

কেমনে তোমারে কব প্রণয়ের কথা।

ভেবেছিনু মনে মনে দূরে দূরে থাকি

চিরজন্ম সঙ্গোপনে পূজিব একাকী--

কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়,

কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়।

আপনি আজিকে যবে শুধাইছ আসি,

কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি॥


রাগ: বিলাতি ভাঙা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
=========================================
তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম

নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম॥

মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন

তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম॥

জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি,

তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি।

মম দুঃখবেদন মম সফল স্বপন

তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম॥


রাগ: বেহাগ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৮ কার্তিক, ১৩০২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1895
রচনাস্থান: জোড়াসাঁকো
=========================================
এই করেছ ভালো, নিঠুর,

এই করেছ ভালো।

এমনি করে হৃদয়ে মোর

তীব্র দহন জ্বালো।

আমার এ ধূপ না পোড়ালে

গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে,

আমার এ দীপ না জ্বালালে

দেয় না কিছুই আলো।

যখন থাকে অচেতনে

এ চিত্ত আমার

আঘাত সে যে পরশ তব

সেই তো পুরস্কার।

অন্ধকারে মোহে লাজে

চোখে তোমায় দেখি না যে,

বজ্রে তোলো আগুন করে

আমার যত কালো।


রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৪ আষাঢ়, ১৩১৭
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভীমরাও শাস্ত্রী
===========================================


No comments:

Post a Comment