Thursday 22 August 2013



 ঝরা পাতা গো, আমি তোমারি দলে ।
অনেক হাসি অনেক অশ্রুজলে
ফাগুন দিল বিদায়মন্ত্র আমার হিয়াতলে ।।
ঝরা পাতা গো, বসন্তী রঙ দিয়ে
শেষের বেশে সেজেছ তুমি কি এ ।
খেলিলে হোলি ধুলায় ঘাসে ঘাসে
বসন্তের এই চরম ইতিহাসে ।
তোমারি মতো আমারো উত্তরী
আগুন-রঙে দিয়ো রঙিন করি-
অস্তরবি লাগাক পরশমণি
প্রাণের মম শেষের সম্বলে ।।
===========================================
আনন্দ লোকে মঙ্গলালোকে
বিরাজ সত্য সুন্দর !

মহিমা তব উদ্ভাসিত
মহা গগন মাঝে
বিশ্ব জগত মণিভূষণ
বেষ্টিত চরণে !

গ্রহ তারক চন্দ্র তপন
ব্যাকুল দ্রুত বেগে
করিছে পান , করিছে স্নান
অক্ষয় কিরণে !
=======================================
ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান--
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান--
আমার আপনহারা প্রাণ আমার বাঁধন-ছেড়া প্রাণ॥
তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে,
তোমার ঝাউয়ের দোলে
মর্মরিয়া ওঠে আমার দুঃখরাতের গান॥
পূর্ণিমাসন্ধ্যায় তোমার রজনীগন্ধায়
রূপসাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়।
তোমার প্রজাপতির পাখা আমার আকাশ-চাওয়া মুগ্ধ চোখের রঙিন-স্বপন-মাখা। 
তোমার চাঁদের আলোয় মিলায় আমার দুঃখসুখের সকল অবসান॥
============================================
তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা।
ওই-যে সুদূর নীহারিকা
যারা করে আছে ভিড় আকাশের নীড়,
ওই যারা দিনরাত্রি
আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী গ্রহ তারা রবি,
তুমি কি তাদের মতো সত্য নও।
হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি॥
নয়নসমুখে তুমি নাই,
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই-- আজি তাই
শ্যামলে শ্যামল তুমি, নীলিমায় নীল।
আমার নিখিল তোমাতে পেয়েছে তার অন্তরের মিল।
নাহি জানি, কেহ নাহি জানে--
তব সুর বাজে মোর গানে,
কবির অন্তরে তুমি কবি--
নও ছবি, নও ছবি, নও শুধু ছবি॥
=========================================
তুই ফেলে এসেছিস কারে মন মনরে আমার
তাই জনম গেলি শান্তি পেলি না রে মন মনরে আমার||

যে পথ দিয়ে চলে গেলি সে পথ এখন ভুলে গেলি রে
কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে মন মনরে আমার?
তুই ফেলে এসেছিস কারে মন মনরে আমার

নদীর জলে থাকি রে কান পেতে
কাঁপেরে প্রাণ পাতার মর্মরেতে||
মনে হয় যে পাবো খুজে ফুলের ভাষা যদি বুঝি রে
যেপথ গেছে সন্ধ্যাতারার পারে
তুই ফেলে এসেছিস কারে মন মনরে আমার
=========================================
তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে,
সে আগুন ছড়িয়ে গেল সব খানে..
যত সব মরা গাছের ডালে ডালে
নাচে আগুন তালে তালে রে,
আকাশে হাত তোলে সে কার পানে..!
আঁধারের তারা যত অবাক্‌ হয়ে রয় চেয়ে,
কোথাকার পাগল হাওয়া বয় ধেয়ে।
নিশীথের বুকের মাঝে এই-যে অমল
উঠল ফুটে স্বর্ণকমল রে,
আগুনের কী গুণ আছে কে জানে..!!
==========================================
কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসারই ঘায়ে--

নিবিড় বেদনাতে পুলক লাগে গায়ে॥

তোমার অভিসারে যাব অগম-পারে

চলিতে পথে পথে বাজুক ব্যথা পায়ে॥

পরানে বাজে বাঁশি, নয়নে বহে ধারা--

দুখের মাধুরীতে করিল দিশাহারা

সকলই নিবে-কেড়ে, দিবে না তবু ছেড়ে--

মন সরে না যেতে, ফেলিলে একি দায়ে॥


রাগ: দেশ-কেদারা
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1336
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1929
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===========================================
বাংলার মাটি বাংলার জল,
বাংলার বায়ু, বাংলার ফল,
পুন্য হউক, পুন্য হউক,
পুন্য হউক, হে ভগবান।

বাংলার ঘর, বাংলার হাট,
বাংলার বন, বাংলার মাঠ,
পুর্ন হউক, পূর্ন হউক,
পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান।

বাঙালির পন, বাঙালির আশা,
বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা,
সত্য হউক, সত্য হউক,
সত্য হউক, হে ভগবান।

বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন,
বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন,
এক হউক, এক হউক,
এক হউক, হে ভগবান।
============================================
আকাশে আজ কোন্‌ চরণের আসা-যাওয়া ।
বাতাসে আজ কোন্‌ পরশের লাগে হাওয়া ॥
অনেক দিনের বিদায়বেলার ব্যাকুল বাণী
আজ উদাসীর বাঁশির সুরে কে দেয় আনি–
বনের ছায়ায় তরুণ চোখের করুণ চাওয়া ॥
কোন্‌ ফাগুনে যে ফুল ফোটা হল সারা
মৌমাছিদের পাখায় পাখায় কাঁদে তারা ।
বকুলতলায় কাজ-ভোলা সেই কোন্‌ দুপুরে
যে-সব কথা ভাসিয়ে দিলেম গানের সুরে
ব্যথায় ভরে ফিরে আসে সে গান-গাওয়া ॥
========================================

এসো এসো ফিরে এসো, বঁধু হে ফিরে এসো।

আমার ক্ষুধিত তৃষিত তাপিত চিত, নাথ হে, ফিরে এসো।

ওহে নিষ্ঠুর, ফিরে এসো,

আমার করুণকোমল এসো,

আমার সজলজলদস্নিগ্ধকান্ত সুন্দর ফিরে এসো,

আমার নিতিসুখ ফিরে এসো,

আমার চিরদুখ ফিরে এসো।

আমার সবসুখদুখমন্থনধন অন্তরে ফিরে এসো।

আমার চিরবাঞ্ছিত এসো,

আমার চিতসঞ্চিত এসো,

ওহে চঞ্চল, হে চিরন্তন, ভুজ- বন্ধনে ফিরে এসো।

আমার বক্ষে ফিরিয়া এসো,

আমার চক্ষে ফিরিয়া এসো,

আমার শয়নে স্বপনে বসনে ভূষণে নিখিল ভুবনে এসো।

আমার মুখের হাসিতে এসো,

আমার চোখের সলিলে এসো,

আমার আদরে আমার ছলনে আমার অভিমানে ফিরে এসো।

আমার সকল স্মরণে এসো,

আমার সকল ভরমে এসো,

আমার ধরম-করম-সোহাগ-শরম-জনম-মরণে এসো ॥


রাগ: ভৈরব-কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1301
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1894
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================
সখী, ওই বুঝি বাঁশি বাজে-- বনমাঝে কি মনোমাঝে॥

বসন্তবায় বহিছে কোথায়,

কোথায় ফুটেছে ফুল,

বলো গো সজনি, এ সুখরজনী

কোন্‌খানে উদিয়াছে-- বনমাঝে কি মনোমাঝে॥

যাব কি যাব না মিছে এ ভাবনা,

সখী, মিছে মরি লোকলাজে।

কে জানে কোথা সে বিরহহুতাশে

ফিরে অভিসারসাজে--

বনমাঝে কি মনোমাঝে

রাগ: পিলু
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1290
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1884
=============================================
তারে দেখাতে পারি নে কেন প্রাণ খুলে গো।

বুঝাতে পারি নে হৃদয়বেদনা ॥

কেমনে সে হেসে চলে যায়, কোন্‌ প্রাণে ফিরেও না চায়--

এত সাধ এত প্রেম করে অপমান॥

এত ব্যথাভরা ভালোবাসা কেহ দেখে না, প্রাণে গোপনে রহিল।

এ প্রেম কুসুম যদি হ'ত প্রাণ হতে ছিঁড়ে লইতাম,

তার চরণে করিতাম দান।

বুঝি সে তুলে নিত না, শুকাতো অনাদরে, তবু তার সংশয় হ'ত অবসান॥

রাগ: দেশ
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১২৯০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
==========================================
একটুকু ছোঁওয়া লাগে, একটুকু কথা শুনি--

তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী।

কিছু পলাশের নেশা, কিছু বা চাঁপায় মেশা,

তাই দিয়ে সুরে সুরে রঙে রসে জাল বুনি॥

যেটুকু কাছেতে আসে ক্ষণিকের ফাঁকে ফাঁকে

চকিত মনের কোণে স্বপনের ছবি আঁকে।

যেটুকু যায় রে দূরে ভাবনা কাঁপায় সুরে,

তাই নিয়ে যায় বেলা নূপুরের তাল গুনি॥


রাগ: কালাংড়া
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২ ফাল্গুন, ১৩৩৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৮
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=============================================
প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ ,
কিন্তু বেদনা থাকে সারাটি জীবন 
 ~ রবী ঠাকুর
======================================================
আসা-যাওয়ার পথের ধারে গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন।

যাবার বেলায় দেব কারে বুকের কাছে বাজল যে বীন॥

সুরগুলি তার নানা ভাগে রেখে যাব পুষ্পরাগে,

মীড়গুলি তার মেঘের রেখায় স্বর্ণলেখায় করব বিলীন॥

কিছু বা সে মিলনমালায় যুগলগলায় রইবে গাঁথা,

কিছু বা সে ভিজিয়ে দেবে দুই চাহনির চোখের পাতা।

কিছু বা কোন্‌ চৈত্রমাসে বকুল-ঢাকা বনের ঘাসে

মনের কথার টুকরো আমার কুড়িয়ে পাবে কোন উদাসীন॥

রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১১ চৈত্র, ১৩২৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৫ মার্চ, ১৯২২
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
========================================
আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ॥

যাব না গো যাব না যে, রইনু পড়ে ঘরের মাঝে--

এই নিরালায় রব আপন কোণে।

যাব না এই মাতাল সমীরণে ॥

আমার এ ঘর বহু যতন ক'রে

ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে।

আমারে যে জাগতে হবে, কী জানি সে আসবে কবে

যদি আমায় পড়ে তাহার মনে

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ॥

রাগ: বেহাগ
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২২ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ আমার মন ভুলায় রে।

ওরে কার পানে মন হাত বাড়িয়ে লুটিয়ে যায় ধুলায় রে॥

ও যে আমায় ঘরের বাহির করে, পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে--

ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে যায় রে কোন্‌ চুলায় রে।

ও যে কোন্‌ বাঁকে কী ধন দেখাবে, কোন্‌খানে কী দায় ঠেকাবে--

কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে ভেবেই না কুলায় রে॥


রাগ: বাউল
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1316
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1909
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
================================================
আমার প্রানের পরে চলে গেল কে
বসন্তের বাতাসটুকুর মতো ।
সে যে ছুঁয়ে গেল , নুয়ে গেল রে
ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত ।
সে চলে গেল বলে গেল না... সে কোথায় গেল ফিরে এল না।
সে যেতে যেতে চেয়ে গেল , কী যেন গেয়ে গেল
তাই আপন মনে বসে আছি কুসুমবনেতে ।।
সে ঢেউয়ের মতো ভেসে গেছে, চাঁদের আলোর দেশে গেছে,
যেখান দিয়ে হেসে গেছে, হাসি তার রেখে গেছে রে
মনে হল আঁখির কোনে আমায় যেন ডেকে গেছে সে।
আমি কোথায় যাব , কোথায় যাব , ভাবতেছি তাই একলা বসে।
সে চাঁদের চোখে বুলিয়ে গেল ঘুমের ডোর ।
কুসুমবনের উপর দিয়ে কী কথা সে বলে গেল।
ফুলের গন্ধ পাগল হয়ে সঙ্গে তারি চলে গেল।
হৃদয় আমার আকুল হল, নয়ন আমার মুদে এল রে
কোথা দিয়ে কোথায় গেল সে।

রাগ: পিলু-কালাংড়া-পরজ-কীর্তন
তাল: আড়খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1290
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

=============================================

No comments:

Post a Comment