তারে দেখাতে পারি নে কেন প্রাণ। (খুলে গো)
কেন বুঝাতে পারি নে হৃদয়-বেদনা।
কেমনে সে হেসে চলে যায়, কোন্ প্রাণে ফিরেও না চায়,
এত সাধ এত প্রেম করে অপমান।
এত ব্যথাভরা ভালোবাসা, কেহ দেখে না,
প্রাণে গোপনে রহিল।
এ প্রেম কুসুম যদি হত, প্রাণ হতে ছিঁড়ে লইতাম,
তার চরণে করিতাম দান,
বুঝি সে তুলে নিত না, শুকাত অনাদরে,
তবু তার সংশয় হত অবসান।
রাগ: দেশ
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১২৯০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
==========================================
মেঘ বলেছে 'যাব যাব', রাত বলেছে 'যাই',
সাগর বলে 'কূল মিলেছে-- আমি তো আর নাই' ॥
দুঃখ বলে 'রইনু চুপে তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে',
আমি বলে 'মিলাই আমি আর কিছু না চাই' ॥
ভুবন বলে 'তোমার তরে আছে বরণমালা',
গগন বলে 'তোমার তরে লক্ষ প্রদীপ জ্বালা'।
প্রেম বলে যে 'যুগে যুগে তোমার লাগি আছি জেগে',
মরণ বলে 'আমি তোমার জীবনতরী বাই' ॥
রাগ: বেহাগ
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ আশ্বিন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৪ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
সাগর বলে 'কূল মিলেছে-- আমি তো আর নাই' ॥
দুঃখ বলে 'রইনু চুপে তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে',
আমি বলে 'মিলাই আমি আর কিছু না চাই' ॥
ভুবন বলে 'তোমার তরে আছে বরণমালা',
গগন বলে 'তোমার তরে লক্ষ প্রদীপ জ্বালা'।
প্রেম বলে যে 'যুগে যুগে তোমার লাগি আছি জেগে',
মরণ বলে 'আমি তোমার জীবনতরী বাই' ॥
রাগ: বেহাগ
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ আশ্বিন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৪ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
============================================
হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহ প্রাণ
কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।
আমার নয়নে তোমার বিশ্বছবি
দেখিয়া লইতে সাধ যায় তব কবি,
আমার মুগ্ধ শ্রবণে নীরব রহি
শুনিয়া লইতে চাহ আপনার গান।
হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহ প্রাণ
কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।
আমার চিত্তে তোমার সৃষ্টিখানি
রচিয়া তুলিছে বিচিত্র এক বাণী।
তারি সাথে প্রভু মিলিয়া তোমার প্রীতি
জাগায়ে তুলিছে আমার সকল গীতি,
আপনারে তুমি দেখিছ মধুর রসে
আমার মাঝারে নিজেরে করিয়া দান।
হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহ প্রাণ
কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।
রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৩ আষাঢ়, ১৩১৭
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
রচনাস্থান: বোলপুর
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভীমরাও শাস্ত্রী
কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।
আমার নয়নে তোমার বিশ্বছবি
দেখিয়া লইতে সাধ যায় তব কবি,
আমার মুগ্ধ শ্রবণে নীরব রহি
শুনিয়া লইতে চাহ আপনার গান।
হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহ প্রাণ
কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।
আমার চিত্তে তোমার সৃষ্টিখানি
রচিয়া তুলিছে বিচিত্র এক বাণী।
তারি সাথে প্রভু মিলিয়া তোমার প্রীতি
জাগায়ে তুলিছে আমার সকল গীতি,
আপনারে তুমি দেখিছ মধুর রসে
আমার মাঝারে নিজেরে করিয়া দান।
হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহ প্রাণ
কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।
রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৩ আষাঢ়, ১৩১৭
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
রচনাস্থান: বোলপুর
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভীমরাও শাস্ত্রী
=============================================
মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে সে দিন ভরা সাঁঝে,
যেতে যেতে দুয়ার হতে কী ভেবে ফিরালে মুখখানি--
কী কথা ছিল যে মনে॥
তুমি সে কি হেসে গেলে আঁখিকোণে--
আমি বসে বসে ভাবি নিয়ে কম্পিত হৃদয়খানি,
তুমি আছ দূর ভুবনে॥
আকাশে উড়িছে বকপাঁতি,
বেদনা আমার তারি সাথি।
বারেক তোমায় শুধাবারে চাই বিদায়কালে কী বল নাই,
সে কি রয়ে গেল গো সিক্ত যূথীর গন্ধবেদনে॥
রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: ২ + ২ ছন্দ
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1344
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1937
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
যেতে যেতে দুয়ার হতে কী ভেবে ফিরালে মুখখানি--
কী কথা ছিল যে মনে॥
তুমি সে কি হেসে গেলে আঁখিকোণে--
আমি বসে বসে ভাবি নিয়ে কম্পিত হৃদয়খানি,
তুমি আছ দূর ভুবনে॥
আকাশে উড়িছে বকপাঁতি,
বেদনা আমার তারি সাথি।
বারেক তোমায় শুধাবারে চাই বিদায়কালে কী বল নাই,
সে কি রয়ে গেল গো সিক্ত যূথীর গন্ধবেদনে॥
রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: ২ + ২ ছন্দ
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1344
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1937
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
=============================================
তুমি ডাক দিয়েছ কোন্ সকালে কেউ তা জানে না,
আমার মন যে কাঁদে আপন মনে কেউ তা মানে না ॥
ফিরি আমি উদাস প্রাণে, তাকাই সবার মুখের পানে,
তোমার মতো এমন টানে কেউ তো টানে না ॥
বেজে ওঠে পঞ্চমে স্বর, কেঁপে ওঠে বন্ধ এ ঘর,
বাহির হতে দুয়ারে কর কেউ তো হানে না।
আকাশে কার ব্যাকুলতা, বাতাস বহে কার বারতা,
এ পথে সেই গোপন কথা কেউ তো আনে না ॥
রাগ: পিলু-ভীমপলশ্রী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1318
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1911
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার মন যে কাঁদে আপন মনে কেউ তা মানে না ॥
ফিরি আমি উদাস প্রাণে, তাকাই সবার মুখের পানে,
তোমার মতো এমন টানে কেউ তো টানে না ॥
বেজে ওঠে পঞ্চমে স্বর, কেঁপে ওঠে বন্ধ এ ঘর,
বাহির হতে দুয়ারে কর কেউ তো হানে না।
আকাশে কার ব্যাকুলতা, বাতাস বহে কার বারতা,
এ পথে সেই গোপন কথা কেউ তো আনে না ॥
রাগ: পিলু-ভীমপলশ্রী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1318
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1911
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
আমি হেথায় থাকি শুধু গাইতে তোমার গান,
দিয়ো তোমার জগৎ-সভায় এইটুকু মোর স্থান ॥
আমি তোমার ভুবন-মাঝে লাগি নি, নাথ, কোনো কাজে--
শুধু কেবল সুরে বাজে অকাজের এই প্রাণ ॥
নিশায় নীরব দেবালয়ে তোমার আরাধন,
তখন মোরে আদেশ কোরো গাইতে হে রাজন।
ভোরে যখন আকাশ জুড়ে বাজবে বীণা সোনার সুরে
আমি যেন না রই দূরে, এই দিয়ো মোর মান ॥
রাগ: পরজ
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1316
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1909
রচনাস্থান: বোলপুর
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভীমরাও শাস্ত্রী
দিয়ো তোমার জগৎ-সভায় এইটুকু মোর স্থান ॥
আমি তোমার ভুবন-মাঝে লাগি নি, নাথ, কোনো কাজে--
শুধু কেবল সুরে বাজে অকাজের এই প্রাণ ॥
নিশায় নীরব দেবালয়ে তোমার আরাধন,
তখন মোরে আদেশ কোরো গাইতে হে রাজন।
ভোরে যখন আকাশ জুড়ে বাজবে বীণা সোনার সুরে
আমি যেন না রই দূরে, এই দিয়ো মোর মান ॥
রাগ: পরজ
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1316
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1909
রচনাস্থান: বোলপুর
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভীমরাও শাস্ত্রী
==========================================
এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে, এসো করো স্নান নবধারাজলে॥
দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ, পরো দেহ ঘেরি মেঘনীল বেশ--
কাজলনয়নে, যূথীমালা গলে, এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে॥
আজি ক্ষণে ক্ষণে হাসিখানি, সখী, অধরে নয়নে উঠুক চমকি।
মল্লারগানে তব মধুস্বরে দিক্ বাণী আনি বনমর্মরে।
ঘনবরিষনে জলকলকলে এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে॥
রাগ: কাফি
তাল: ২ + ২ ছন্দ
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1332
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1925
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ, পরো দেহ ঘেরি মেঘনীল বেশ--
কাজলনয়নে, যূথীমালা গলে, এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে॥
আজি ক্ষণে ক্ষণে হাসিখানি, সখী, অধরে নয়নে উঠুক চমকি।
মল্লারগানে তব মধুস্বরে দিক্ বাণী আনি বনমর্মরে।
ঘনবরিষনে জলকলকলে এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে॥
রাগ: কাফি
তাল: ২ + ২ ছন্দ
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1332
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1925
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
================================================
তোমার সুর শুনায়ে যে ঘুম ভাঙাও সে ঘুম আমার রমণীয়--
জাগরণের সঙ্গিনী সে, তারে তোমার পরশ দিয়ো ॥
অন্তরে তার গভীর ক্ষুধা, গোপনে চায় আলোকসুধা,
আমার রাতের বুকে সে যে তোমার প্রাতের আপন প্রিয় ॥
তারি লাগি আকাশ রাঙা আঁধার-ভাঙা অরুণরাগে,
তারি লাগি পাখির গানে নবীন আশার আলাপ জাগে।
নীরব তোমার চরণধ্বনি শুনায় তারে আগমনী,
সন্ধ্যবেলার কুঁড়ি তারে সকালবেলায় তুলে নিয়ো ॥
রাগ: আশাবরী-ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৩৩৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৩ ডিসেম্বর, ১৯২৭
রচনাস্থান: কলকাতা
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
জাগরণের সঙ্গিনী সে, তারে তোমার পরশ দিয়ো ॥
অন্তরে তার গভীর ক্ষুধা, গোপনে চায় আলোকসুধা,
আমার রাতের বুকে সে যে তোমার প্রাতের আপন প্রিয় ॥
তারি লাগি আকাশ রাঙা আঁধার-ভাঙা অরুণরাগে,
তারি লাগি পাখির গানে নবীন আশার আলাপ জাগে।
নীরব তোমার চরণধ্বনি শুনায় তারে আগমনী,
সন্ধ্যবেলার কুঁড়ি তারে সকালবেলায় তুলে নিয়ো ॥
রাগ: আশাবরী-ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৩৩৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৩ ডিসেম্বর, ১৯২৭
রচনাস্থান: কলকাতা
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
নিদ্রাহারা রাতের এ গান বাঁধব আমি কেমন সুরে।
কোন্ রজনীগন্ধা হতে আনব সে তান কণ্ঠে পূরে॥
সুরের কাঙাল আমার ব্যথা ছায়ার কাঙাল রৌদ্র যথা
সাঁজ-সকালে বনের পথে উদাস হয়ে বেড়ায় ঘুরে॥
ওগো, সে কোন্ বিহান বেলায় এই পথে কার পায়ের তলে
নাম-না-জানা তৃণকুসুম শিউরেছিল শিশিরজলে।
অলকে তার একটি গুছি করবীফুল রক্তরুচি,
নয়ন করে কী ফুল চয়ন নীল গগনে দূরে দূরে॥
রাগ: গৌড়সারং
তাল: ষষ্ঠী
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৩ চৈত্র, ১৩২৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৭ মার্চ, ১৯২২
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
কোন্ রজনীগন্ধা হতে আনব সে তান কণ্ঠে পূরে॥
সুরের কাঙাল আমার ব্যথা ছায়ার কাঙাল রৌদ্র যথা
সাঁজ-সকালে বনের পথে উদাস হয়ে বেড়ায় ঘুরে॥
ওগো, সে কোন্ বিহান বেলায় এই পথে কার পায়ের তলে
নাম-না-জানা তৃণকুসুম শিউরেছিল শিশিরজলে।
অলকে তার একটি গুছি করবীফুল রক্তরুচি,
নয়ন করে কী ফুল চয়ন নীল গগনে দূরে দূরে॥
রাগ: গৌড়সারং
তাল: ষষ্ঠী
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৩ চৈত্র, ১৩২৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৭ মার্চ, ১৯২২
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
রোদন-ভরা এ বসন্ত
কখনো আসে নি বুঝি আগে।
মোর বিরহবেদনা রাঙালো
কিংশুকরক্তিমরাগে।
কুঞ্জদ্বারে বনমল্লিকা
সেজেছে পরিয়া নব পত্রালিকা,
সারা দিন-রজনী অনিমিখা
কার পথ চেয়ে জাগে।
দক্ষিণসমীরে দূর গগনে
একেলা বিরহী গাহে বুঝি গো।
কুঞ্জবনে মোর মুকুল যত
আবরণবন্ধন ছিঁড়িতে চাহে।
আমি এ প্রাণের রুদ্ধ দ্বারে
ব্যাকুল কর হানি বারে বারে,
দেওয়া হল না যে আপনারে
এই ব্যথা মনে লাগে॥
রাগ: মিশ্র বেহাগ-কীর্তন
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৫ মাঘ, ১৩৪২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৯ জানুয়ারি, ১৯৩৬
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
কখনো আসে নি বুঝি আগে।
মোর বিরহবেদনা রাঙালো
কিংশুকরক্তিমরাগে।
কুঞ্জদ্বারে বনমল্লিকা
সেজেছে পরিয়া নব পত্রালিকা,
সারা দিন-রজনী অনিমিখা
কার পথ চেয়ে জাগে।
দক্ষিণসমীরে দূর গগনে
একেলা বিরহী গাহে বুঝি গো।
কুঞ্জবনে মোর মুকুল যত
আবরণবন্ধন ছিঁড়িতে চাহে।
আমি এ প্রাণের রুদ্ধ দ্বারে
ব্যাকুল কর হানি বারে বারে,
দেওয়া হল না যে আপনারে
এই ব্যথা মনে লাগে॥
রাগ: মিশ্র বেহাগ-কীর্তন
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৫ মাঘ, ১৩৪২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৯ জানুয়ারি, ১৯৩৬
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
============================================
ওরে ঝড় নেমে আয়, আয় রে আমার শুকনো পাতার ডালে,
এই বরষায় নবশ্যামের আগমনের কালে॥
যা উদাসীন, যা প্রাণহীন, যা আনন্দহারা,
চরম রাতের অশ্রুধারায় আজ হয়ে যাক সারা--
যাবার যাহা যাক সে চলে রুদ্র নাচের তালে॥
আসন আমার পাততে হবে রিক্ত প্রাণের ঘরে,
নবীন বসন পরতে হবে সিক্ত বুকের 'পরে।
নদীর জলে বান ডেকেছে কূল গেল তার ভেসে,
যূথীবনের গন্ধবাণী ছুটল নিরুদ্দেশে--
পরান আমার জাগল বুঝি মরণ-অন্তরালে॥
রাগ: বাউল
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ শ্রাবণ, ১৩৩৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৯ জুলাই, ১৯২৯
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
এই বরষায় নবশ্যামের আগমনের কালে॥
যা উদাসীন, যা প্রাণহীন, যা আনন্দহারা,
চরম রাতের অশ্রুধারায় আজ হয়ে যাক সারা--
যাবার যাহা যাক সে চলে রুদ্র নাচের তালে॥
আসন আমার পাততে হবে রিক্ত প্রাণের ঘরে,
নবীন বসন পরতে হবে সিক্ত বুকের 'পরে।
নদীর জলে বান ডেকেছে কূল গেল তার ভেসে,
যূথীবনের গন্ধবাণী ছুটল নিরুদ্দেশে--
পরান আমার জাগল বুঝি মরণ-অন্তরালে॥
রাগ: বাউল
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ শ্রাবণ, ১৩৩৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৯ জুলাই, ১৯২৯
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===============================================
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার
গানের ওপারে।
আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি
পাই নে তোমারে।
বাতাস বহে মরি মরি
আর বেঁধে রেখো না তরী,
এসো এসো পার হয়ে মোর
হৃদয়-মাঝারে।
তোমার সাথে গানের খেলা
দূরের খেলা যে,
বেদনাতে বাঁশি বাজায়
সকল বেলা যে।
কবে নিয়ে আমার বাঁশি
বাজাবে গো আপনি আসি,
আনন্দময় নীরব রাতের
নিবিড় আঁধারে।
গানের ওপারে।
আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি
পাই নে তোমারে।
বাতাস বহে মরি মরি
আর বেঁধে রেখো না তরী,
এসো এসো পার হয়ে মোর
হৃদয়-মাঝারে।
তোমার সাথে গানের খেলা
দূরের খেলা যে,
বেদনাতে বাঁশি বাজায়
সকল বেলা যে।
কবে নিয়ে আমার বাঁশি
বাজাবে গো আপনি আসি,
আনন্দময় নীরব রাতের
নিবিড় আঁধারে।
===========================================
নৃত্যের তালে তালে, নটরাজ, ঘুচাও ঘুচাও ঘুচাও সকল বন্ধ হে।
সুপ্তি ভাঙাও, চিত্তে জাগাও মুক্ত সুরের ছন্দ হে॥
তোমার চরণপবনপরশে সরস্বতীর মানসসরসে
যুগে যুগে কালে কালে সুরে সুরে তালে তালে
ঢেউ তুলে দাও, মাতিয়ে জাগাও অমলকমলগন্ধে হে॥
নমো নমো নমো--
তোমার নৃত্য অমিত বিত্ত ভরুক চিত্ত মম॥
নৃত্যে তোমার মুক্তির রূপ, নৃত্যে তোমার মায়া,
বিশ্বতনুতে অণুতে অণুতে কাঁপে নৃত্যের ছায়া।
তোমার বিশ্ব-নাচের দোলায় দোলায় বাঁধন পরায় বাঁধন খোলায়
যুগে যুগে কালে কালে সুরে সুরে তালে তালে,
অন্ত কে তার সন্ধান পায় ভাবিতে লাগায় ধন্দ হে॥
নমো নমো নমো--
তোমার নৃত্য অমিত বিত্ত ভরুক চিত্ত মম॥
নৃত্যের বশে সুন্দর হল বিদ্রোহী পরমাণু,
পদযুগ ঘিরে জ্যোতিমঞ্জীরে বাজিল চন্দ্র ভানু।
তব নৃত্যের প্রাণবেদনায় বিবশ বিশ্ব জাগে চেতনায়
যুগে যুগে কালে কালে সুরে সুরে তালে তালে,
সুখে দুখে হয় তরঙ্গময় তোমার পরমানন্দ হে॥
নমো নমো নমো--
তোমার নৃত্য অমিত বিত্ত ভরুক চিত্ত মম॥
মোর সংসারে তাণ্ডব তব কম্পিত জটাজালে।
লোকে লোকে ঘুরে এসেছি তোমার নাচের ঘূর্ণিতালে।
ওগো সন্ন্যাসী, ওগো সুন্দর, ওগো শঙ্কর, হে ভয়ঙ্কর,
যুগে যুগে কালে কালে সুরে সুরে তালে তালে,
জীবন-মরণ-নাচের ডমরু বাজাও জলদমন্দ্র হে॥
নমো নমো নমো--
তোমার নৃত্য অমিত বিত্ত ভরুক চিত্ত মম॥
রাগ: খাম্বাজ
তাল: তালফেরতা-দাদরা-ষষ্ঠী-কাহারবা-ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৩৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): মার্চ, ১৯২৭
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনে
সুপ্তি ভাঙাও, চিত্তে জাগাও মুক্ত সুরের ছন্দ হে॥
তোমার চরণপবনপরশে সরস্বতীর মানসসরসে
যুগে যুগে কালে কালে সুরে সুরে তালে তালে
ঢেউ তুলে দাও, মাতিয়ে জাগাও অমলকমলগন্ধে হে॥
নমো নমো নমো--
তোমার নৃত্য অমিত বিত্ত ভরুক চিত্ত মম॥
নৃত্যে তোমার মুক্তির রূপ, নৃত্যে তোমার মায়া,
বিশ্বতনুতে অণুতে অণুতে কাঁপে নৃত্যের ছায়া।
তোমার বিশ্ব-নাচের দোলায় দোলায় বাঁধন পরায় বাঁধন খোলায়
যুগে যুগে কালে কালে সুরে সুরে তালে তালে,
অন্ত কে তার সন্ধান পায় ভাবিতে লাগায় ধন্দ হে॥
নমো নমো নমো--
তোমার নৃত্য অমিত বিত্ত ভরুক চিত্ত মম॥
নৃত্যের বশে সুন্দর হল বিদ্রোহী পরমাণু,
পদযুগ ঘিরে জ্যোতিমঞ্জীরে বাজিল চন্দ্র ভানু।
তব নৃত্যের প্রাণবেদনায় বিবশ বিশ্ব জাগে চেতনায়
যুগে যুগে কালে কালে সুরে সুরে তালে তালে,
সুখে দুখে হয় তরঙ্গময় তোমার পরমানন্দ হে॥
নমো নমো নমো--
তোমার নৃত্য অমিত বিত্ত ভরুক চিত্ত মম॥
মোর সংসারে তাণ্ডব তব কম্পিত জটাজালে।
লোকে লোকে ঘুরে এসেছি তোমার নাচের ঘূর্ণিতালে।
ওগো সন্ন্যাসী, ওগো সুন্দর, ওগো শঙ্কর, হে ভয়ঙ্কর,
যুগে যুগে কালে কালে সুরে সুরে তালে তালে,
জীবন-মরণ-নাচের ডমরু বাজাও জলদমন্দ্র হে॥
নমো নমো নমো--
তোমার নৃত্য অমিত বিত্ত ভরুক চিত্ত মম॥
রাগ: খাম্বাজ
তাল: তালফেরতা-দাদরা-ষষ্ঠী-কাহারবা-ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৩৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): মার্চ, ১৯২৭
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনে
=============================================
ওগো নদী, আপন বেগে পাগল-পারা,
আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু গন্ধভরে তন্দ্রাহারা॥
আমি সদা অচল থাকি, গভীর চলা গোপন রাখি,
আমার চলা নবীন পাতায়, আমার চলা ফুলের ধারা॥
ওগো নদী, চলার বেগে পাগল-পারা,
পথে পথে বাহির হয়ে আপন-হারা--
আমার চলা যায় না বলা-- আলোর পানে প্রাণের চলা--
আকাশ বোঝে আনন্দ তার, বোঝে নিশার নীরব তারা॥
রাগ: পিলু
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৩ ফাল্গুন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ মার্চ, ১৯১৫
রচনাস্থান: বোলপুর থেকে কলকাতা যাবার পথে ট্রেনে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু গন্ধভরে তন্দ্রাহারা॥
আমি সদা অচল থাকি, গভীর চলা গোপন রাখি,
আমার চলা নবীন পাতায়, আমার চলা ফুলের ধারা॥
ওগো নদী, চলার বেগে পাগল-পারা,
পথে পথে বাহির হয়ে আপন-হারা--
আমার চলা যায় না বলা-- আলোর পানে প্রাণের চলা--
আকাশ বোঝে আনন্দ তার, বোঝে নিশার নীরব তারা॥
রাগ: পিলু
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৩ ফাল্গুন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ মার্চ, ১৯১৫
রচনাস্থান: বোলপুর থেকে কলকাতা যাবার পথে ট্রেনে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
========================================
তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই--
কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই ॥
মৃত্যু সে ধরে মৃত্যুর রূপ, দুঃখ হয় হে দুঃখের কূপ,
তোমা হতে যবে হইয়ে বিমুখ আপনার পানে চাই॥
হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা-কিছু সব আছে আছে আছে--
নাই নাই ভয়, সে শুধু আমারই, নিশিদিন কাঁদি তাই।
অন্তরগ্লানি সংসারভার পলক ফেলিতে কোথা একাকার
জীবনের মাঝে স্বরূপ তোমার রাখিবারে যদি পাই ॥
রাগ: বেহাগ
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1307
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1901
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন
কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই ॥
মৃত্যু সে ধরে মৃত্যুর রূপ, দুঃখ হয় হে দুঃখের কূপ,
তোমা হতে যবে হইয়ে বিমুখ আপনার পানে চাই॥
হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা-কিছু সব আছে আছে আছে--
নাই নাই ভয়, সে শুধু আমারই, নিশিদিন কাঁদি তাই।
অন্তরগ্লানি সংসারভার পলক ফেলিতে কোথা একাকার
জীবনের মাঝে স্বরূপ তোমার রাখিবারে যদি পাই ॥
রাগ: বেহাগ
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1307
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1901
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন
==============================================
No comments:
Post a Comment