যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।
যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,
কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, আহা,
ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের,
শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।
তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে,
কাটবে দিন কাটবে,
কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন কাটে, আহা,
ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সে দিন উঠবে ভরি--
চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।
তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি-- আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে॥
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ এপ্রিল, ১৯১৬
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাই নি।
তোমায় দেখতে আমি পাই নি।
বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি ॥
আমার সকল ভালোবাসায় সকল আঘাত সকল আশায়
তুমি ছিলে আমার কাছে, তোমার কাছে যাই নি ॥
তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে আমার খেলায়--
আনন্দে তাই ভুলেছিলেম, কেটেছে দিন হেলায়।
গোপন রহি গভীর প্রাণে আমার দুঃখসুখের গানে
সুর দিয়েছ তুমি, আমি তোমার গান তো গাই নি ॥
রাগ: পিলু
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: কলকাতার পথে রেলগাড়িতে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমায় দেখতে আমি পাই নি।
বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি ॥
আমার সকল ভালোবাসায় সকল আঘাত সকল আশায়
তুমি ছিলে আমার কাছে, তোমার কাছে যাই নি ॥
তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে আমার খেলায়--
আনন্দে তাই ভুলেছিলেম, কেটেছে দিন হেলায়।
গোপন রহি গভীর প্রাণে আমার দুঃখসুখের গানে
সুর দিয়েছ তুমি, আমি তোমার গান তো গাই নি ॥
রাগ: পিলু
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: কলকাতার পথে রেলগাড়িতে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
================================================
আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে
তাই হেরি তায় সকল খানে॥
আছে সে নয়নতারায় আলোকধারায়, তাই না হারায়--
ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায়
তাকাই আমি যে দিক-পানে॥
আমি তার মুখের কথা শুনব ব'লে গেলাম কোথা,
শোনা হল না, হল না--
আজ ফিরে এসে নিজের দেশে এই-যে শুনি
শুনি তাহার বাণী আপন গানে॥
কে তোরা খুঁজিস তারে কাঙাল-বেশে দ্বারে দ্বারে,
দেখা মেলে না মেলে না,--
ও তোরা আয় রে ধেয়ে দেখ্ রে চেয়ে আমার বুকে --
ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে॥
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
তাই হেরি তায় সকল খানে॥
আছে সে নয়নতারায় আলোকধারায়, তাই না হারায়--
ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায়
তাকাই আমি যে দিক-পানে॥
আমি তার মুখের কথা শুনব ব'লে গেলাম কোথা,
শোনা হল না, হল না--
আজ ফিরে এসে নিজের দেশে এই-যে শুনি
শুনি তাহার বাণী আপন গানে॥
কে তোরা খুঁজিস তারে কাঙাল-বেশে দ্বারে দ্বারে,
দেখা মেলে না মেলে না,--
ও তোরা আয় রে ধেয়ে দেখ্ রে চেয়ে আমার বুকে --
ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে॥
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
==========================================
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
কান্নাহাসির বাঁধন তারা সইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
আমার প্রাণের গানের ভাষা
শিখবে তারা ছিল আশা--
উড়ে গেল, সকল কথা কইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
স্বপন দেখি, যেন তারা কার আশে
ফেরে আমার ভাঙা খাঁচার চার পাশে--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
এত বেদন হয় কি ফাঁকি।
ওরা কি সব ছায়ার পাখি।
আকাশ-পারে কিছুই কি গো বইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
রাগ: ইমন-পূরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1325
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
কান্নাহাসির বাঁধন তারা সইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
আমার প্রাণের গানের ভাষা
শিখবে তারা ছিল আশা--
উড়ে গেল, সকল কথা কইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
স্বপন দেখি, যেন তারা কার আশে
ফেরে আমার ভাঙা খাঁচার চার পাশে--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
এত বেদন হয় কি ফাঁকি।
ওরা কি সব ছায়ার পাখি।
আকাশ-পারে কিছুই কি গো বইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
রাগ: ইমন-পূরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1325
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
============================================
প্রাণ চায় চক্ষু না চায়, মরি একি তোর দুস্তরলজ্জা।
সুন্দর এসে ফিরে যায়, তবে কার লাগি মিথ্যা এ সজ্জা॥
মুখে নাহি নিঃসরে ভাষ, দহে অন্তরে নির্বাক বহ্নি।
ওষ্ঠে কী নিষ্ঠুর হাস, তব মর্মে যে ক্রন্দন তন্বী!
মাল্য যে দংশিছে হায়, তব শয্যা যে কণ্টকশয্যা
মিলনসমুদ্রবেলায় চির- বিচ্ছেদজর্জর মজ্জা॥
রাগ: ভৈরবী-বাউল
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
সুন্দর এসে ফিরে যায়, তবে কার লাগি মিথ্যা এ সজ্জা॥
মুখে নাহি নিঃসরে ভাষ, দহে অন্তরে নির্বাক বহ্নি।
ওষ্ঠে কী নিষ্ঠুর হাস, তব মর্মে যে ক্রন্দন তন্বী!
মাল্য যে দংশিছে হায়, তব শয্যা যে কণ্টকশয্যা
মিলনসমুদ্রবেলায় চির- বিচ্ছেদজর্জর মজ্জা॥
রাগ: ভৈরবী-বাউল
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
=============================================
তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন, মন রে আমার।
তাই জনম গেল, শান্তি পেলি না রে মন, মন রে আমার॥
যে পথ দিয়ে চলে এলি সে পথ এখন ভুলে গেলি--
কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে মন, মন রে আমার॥
নদীর জলে থাকি রে কান পেতে,
কাঁপে যে প্রাণ পাতার মর্মরেতে।
মনে হয় যে পাব খুঁজি ফুলের ভাষা যদি বুঝি,
যে পথ গেছে সন্ধ্যাতারার পারে মন, মন রে আমার॥
রাগ: ভৈরবী-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1915
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
তাই জনম গেল, শান্তি পেলি না রে মন, মন রে আমার॥
যে পথ দিয়ে চলে এলি সে পথ এখন ভুলে গেলি--
কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে মন, মন রে আমার॥
নদীর জলে থাকি রে কান পেতে,
কাঁপে যে প্রাণ পাতার মর্মরেতে।
মনে হয় যে পাব খুঁজি ফুলের ভাষা যদি বুঝি,
যে পথ গেছে সন্ধ্যাতারার পারে মন, মন রে আমার॥
রাগ: ভৈরবী-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1915
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
==============================================
অনেক কথা যাও যে ব'লে কোনো কথা না বলি।
তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি॥
যে আছে মম গভীর প্রাণে ভেদিবে তারে হাসির বাণে,
চকিতে চাহ মুখের পানে তুমি যে কুতূহলী।
তোমারে তাই এড়াতে চাই, ফিরিয়া যাই চলি।
আমার চোখে যে চাওয়াখানি ধোওয়া সে আঁখিলোরে--
তোমারে আমি দেখিতে পাই, তুমি না পাও মোরে।
তোমার মনে কুয়াশা আছে, আপনি ঢাকা আপন-কাছে--
নিজের অগোচরেই পাছে আমারে যাও ছলি
তোমারে তাই এড়াতে চাই, ফিরিয়া যাই চলি॥
রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২১ চৈত্র, ১৩৩২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৪ এপ্রিল, ১৯২৬
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===========================================
একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রাণেশ হে,
আনন্দবসন্তসমাগমে ॥
বিকশিত প্রীতিকুসুম হে
পুলকিত চিতকাননে ॥
জীবনলতা অবনতা তব চরণে।
হরষগীত উচ্ছ্বসিত হে
কিরণমগন গগনে ॥
রাগ: পূর্ণ ষড়জ রাগিনী
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1299
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1893
স্বরলিপিকার: সরলা দেবী
আনন্দবসন্তসমাগমে ॥
বিকশিত প্রীতিকুসুম হে
পুলকিত চিতকাননে ॥
জীবনলতা অবনতা তব চরণে।
হরষগীত উচ্ছ্বসিত হে
কিরণমগন গগনে ॥
রাগ: পূর্ণ ষড়জ রাগিনী
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1299
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1893
স্বরলিপিকার: সরলা দেবী
==============================================
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়--
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়--
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়॥
রাগ: মিশ্র ভূপালী-বিলাতি ভাঙা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়--
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়--
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়॥
রাগ: মিশ্র ভূপালী-বিলাতি ভাঙা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
============================================
তুমি কোন্ কাননের ফুল, কোন্ গগনের তারা।
তোমায় কোথায় দেখেছি যেন কোন্ স্বপনের পারা ॥
কবে তুমি গেয়েছিলে, আঁখির পানে চেয়েছিলে
ভুলে গিয়েছি।
শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ওই নয়নের তারা ॥
তুমি কথা কোয়ো না, তুমি চেয়ে চলে যাও।
এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গ'লে যাও।
আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে চেয়ে থাকি মধুর প্রাণে,
তোমার আঁখির মতন দুটি তারা ঢালুক কিরণধারা ॥
রাগ: মিশ্র পিলু-বারোয়াঁ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1293
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1886
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমায় কোথায় দেখেছি যেন কোন্ স্বপনের পারা ॥
কবে তুমি গেয়েছিলে, আঁখির পানে চেয়েছিলে
ভুলে গিয়েছি।
শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ওই নয়নের তারা ॥
তুমি কথা কোয়ো না, তুমি চেয়ে চলে যাও।
এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গ'লে যাও।
আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে চেয়ে থাকি মধুর প্রাণে,
তোমার আঁখির মতন দুটি তারা ঢালুক কিরণধারা ॥
রাগ: মিশ্র পিলু-বারোয়াঁ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1293
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1886
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
==============================================
সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা।
সেই স্মৃতিটুকু কভু খনে খনে যেন জাগে মনে, ভুলো না ॥
সেদিন বাতাসে ছিল তুমি জানো-- আমারি মনের প্রলাপ জড়ানো,
আকাশে আকাশে আছিল ছড়ানো তোমার হাসির তুলনা ॥
যেতে যেতে পথে পূর্ণিমারাতে চাঁদ উঠেছিল গগনে।
দেখা হয়েছিল তোমাতে আমাতে কী জানি কী মহা লগনে।
এখন আমার বেলা নাহি আর, বহিব একাকী বিরহের ভার--
বাঁধিনু যে রাখী পরানে তোমার সে রাখী খুলো না, খুলো না ॥
রাগ: পিলু
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩০ আশ্বিন, ১৩৩৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৭ অক্টোবর, ১৯২৭
রচনাস্থান: ব্যাংকক থেকে পিনাং যাবার পথে
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
সেই স্মৃতিটুকু কভু খনে খনে যেন জাগে মনে, ভুলো না ॥
সেদিন বাতাসে ছিল তুমি জানো-- আমারি মনের প্রলাপ জড়ানো,
আকাশে আকাশে আছিল ছড়ানো তোমার হাসির তুলনা ॥
যেতে যেতে পথে পূর্ণিমারাতে চাঁদ উঠেছিল গগনে।
দেখা হয়েছিল তোমাতে আমাতে কী জানি কী মহা লগনে।
এখন আমার বেলা নাহি আর, বহিব একাকী বিরহের ভার--
বাঁধিনু যে রাখী পরানে তোমার সে রাখী খুলো না, খুলো না ॥
রাগ: পিলু
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩০ আশ্বিন, ১৩৩৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৭ অক্টোবর, ১৯২৭
রচনাস্থান: ব্যাংকক থেকে পিনাং যাবার পথে
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=============================================
চক্ষে আমার তৃষ্ণা, ওগো তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে।
আমি বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন, সন্তাপে প্রাণ যায় যে পুড়ে॥
ঝড় উঠেছে তপ্ত হাওয়ায়, মনকে সুদূর শূন্যে ধাওয়ায়--
অবগুণ্ঠন যায় যে উড়ে॥
যে-ফুল কানন করত আলো
কালো হয়ে সে শুকাল।
ঝরনারে কে দিল বাধা-- নিষ্ঠুর পাষাণে বাঁধা
দুঃখের শিখরচূড়ে॥
রাগ: বৃন্দাবনী সারং-আড়ানা
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ভাদ্র, ১৩৪৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1938
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমি বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন, সন্তাপে প্রাণ যায় যে পুড়ে॥
ঝড় উঠেছে তপ্ত হাওয়ায়, মনকে সুদূর শূন্যে ধাওয়ায়--
অবগুণ্ঠন যায় যে উড়ে॥
যে-ফুল কানন করত আলো
কালো হয়ে সে শুকাল।
ঝরনারে কে দিল বাধা-- নিষ্ঠুর পাষাণে বাঁধা
দুঃখের শিখরচূড়ে॥
রাগ: বৃন্দাবনী সারং-আড়ানা
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ভাদ্র, ১৩৪৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1938
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==============================================
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না?।
ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে
হারাই-হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে ॥
কী করিলে বলো পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে।
এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে?
আর কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আমি প্রাণপণ--
তুমি যদি বল এখনি করিব বিষয়বাসনা বিসর্জন ॥
রাগ: কাফি
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৯ মাঘ, ১২৯১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না?।
ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে
হারাই-হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে ॥
কী করিলে বলো পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে।
এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে?
আর কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আমি প্রাণপণ--
তুমি যদি বল এখনি করিব বিষয়বাসনা বিসর্জন ॥
রাগ: কাফি
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৯ মাঘ, ১২৯১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন
===========================================
দিবস রজনী, আমি যেন কার
আশায় আশায় থাকি।
(তাই) চমকিত মন, চকিত শ্রবণ,
তৃষিত আকুল আঁখি।
চঞ্চল হয়ে ঘুরিয়ে বেড়াই,
সদা মনে হয় যদি দেখা পাই,
"কে আসিছে" বলে চমকিয়ে চাই
কাননে ডাকিলে পাখি।
জাগরণে তারে না দেখিতে পাই,
থাকি স্বপনের আশে,
ঘুমের আড়ালে যদি ধরা দেয়,
বাঁধিব স্বপনপাশে।
এত ভালোবাসি, এত যারে চাই,
মনে হয় না তো সে যে কাছে নাই,
যেন এ বাসনা ব্যাকুল আবেগে,
তাহারে আনিবে ডাকি।
রাগ: পিলু
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী
আশায় আশায় থাকি।
(তাই) চমকিত মন, চকিত শ্রবণ,
তৃষিত আকুল আঁখি।
চঞ্চল হয়ে ঘুরিয়ে বেড়াই,
সদা মনে হয় যদি দেখা পাই,
"কে আসিছে" বলে চমকিয়ে চাই
কাননে ডাকিলে পাখি।
জাগরণে তারে না দেখিতে পাই,
থাকি স্বপনের আশে,
ঘুমের আড়ালে যদি ধরা দেয়,
বাঁধিব স্বপনপাশে।
এত ভালোবাসি, এত যারে চাই,
মনে হয় না তো সে যে কাছে নাই,
যেন এ বাসনা ব্যাকুল আবেগে,
তাহারে আনিবে ডাকি।
রাগ: পিলু
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী
===============================================
তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই।
মনোহরণ চপলচরণ সোনার হরিণ চাই॥
সে-যে চমকে বেড়ায় দৃষ্টি এড়ায়, যায় না তারে বাঁধা।
সে-যে নাগাল পেলে পালায় ঠেলে, লাগায় চোখে ধাঁদা।
আমি ছুটব পিছে মিছে মিছে পাই বা নাহি পাই--
আামি আপন-মনে মাঠে বনে উধাও হয়ে ধাই॥
তোরা পাবার জিনিস হাতে কিনিস, রাখিস ঘরে ভরে--
যারে যায় না পাওয়া তারি হাওয়া লাগল কেন মোরে।
আমার যা ছিল তা গেল ঘুচে যা নেই তার ঝোঁকে--
আমার ফুরোয় পুঁজি, ভাবিস, বুঝি মরি তারি শোকে?
আমি আছি সুখে হাস্যমুখে, দুঃখ আমার নাই।
আমি আপন-মনে মাঠে বনে উধাও হয়ে ধাই॥
রাগ: বেহাগ-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: প্রফুল্লকুমার দাস
মনোহরণ চপলচরণ সোনার হরিণ চাই॥
সে-যে চমকে বেড়ায় দৃষ্টি এড়ায়, যায় না তারে বাঁধা।
সে-যে নাগাল পেলে পালায় ঠেলে, লাগায় চোখে ধাঁদা।
আমি ছুটব পিছে মিছে মিছে পাই বা নাহি পাই--
আামি আপন-মনে মাঠে বনে উধাও হয়ে ধাই॥
তোরা পাবার জিনিস হাতে কিনিস, রাখিস ঘরে ভরে--
যারে যায় না পাওয়া তারি হাওয়া লাগল কেন মোরে।
আমার যা ছিল তা গেল ঘুচে যা নেই তার ঝোঁকে--
আমার ফুরোয় পুঁজি, ভাবিস, বুঝি মরি তারি শোকে?
আমি আছি সুখে হাস্যমুখে, দুঃখ আমার নাই।
আমি আপন-মনে মাঠে বনে উধাও হয়ে ধাই॥
রাগ: বেহাগ-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: প্রফুল্লকুমার দাস
===========================================
তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে,
এ আগুন ছড়িয়ে গেল সব খানে॥
যত সব মরা গাছের ডালে ডালে
নাচে আগুন তালে তালে রে,
আকাশে হাত তোলে সে কার পানে ॥
আঁধারের তারা যত অবাক্ হয়ে রয় চেয়ে,
কোথাকার পাগল হাওয়া বয় ধেয়ে।
নিশীথের বুকের মাঝে এই-যে অমল
উঠল ফুটে স্বর্ণকমল,
আগুনের কী গুণ আছে কে জানে ॥
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৮ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ এপ্রিল, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
এ আগুন ছড়িয়ে গেল সব খানে॥
যত সব মরা গাছের ডালে ডালে
নাচে আগুন তালে তালে রে,
আকাশে হাত তোলে সে কার পানে ॥
আঁধারের তারা যত অবাক্ হয়ে রয় চেয়ে,
কোথাকার পাগল হাওয়া বয় ধেয়ে।
নিশীথের বুকের মাঝে এই-যে অমল
উঠল ফুটে স্বর্ণকমল,
আগুনের কী গুণ আছে কে জানে ॥
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৮ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ এপ্রিল, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=============================================
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে ॥
আমার এই দেহখানি তুলে ধরো,
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো--
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে ॥
আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব
সারা রাত ফোটাক তারা নব নব।
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো,
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো--
ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে ঊর্ধ্ব পানে ॥
রাগ: গৌড়সারং
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১১ ভাদ্র, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৮ অগাস্ট, ১৯১৪
রচনাস্থান: সুরুল
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে ॥
আমার এই দেহখানি তুলে ধরো,
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো--
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে ॥
আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব
সারা রাত ফোটাক তারা নব নব।
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো,
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো--
ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে ঊর্ধ্ব পানে ॥
রাগ: গৌড়সারং
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১১ ভাদ্র, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৮ অগাস্ট, ১৯১৪
রচনাস্থান: সুরুল
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=============================================
No comments:
Post a Comment