Wednesday 21 August 2013

 চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো।

ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো ॥

পাগল হাওয়া বুঝতে নারে ডাক পড়েছে কোথায় তারে--


ফুলের বনে যার পাশে যায় তারেই লাগে ভালো ॥

নীল গগনের ললাটখানি চন্দনে আজ মাখা,

বাণীবনের হংসমিথুন মেলেছে আজ পাখা।

পারিজাতের কেশর নিয়ে ধরায়, শশী, ছড়াও কী এ।

ইন্দ্রপুরীর কোন্‌ রমণী বাসরপ্রদীপ জ্বালো ॥

রাগ: পিলু
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1336
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1929
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===========================================
ঠাঁই নাই, 
ঠাঁই নাই,
 ছোটো এ তরী, 
আমারী সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।’

~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
===========================================
আমার মন কেমন করে--

কে জানে, কে জানে, কে জানে কাহার তরে॥

অলখ পথের পাখি গেল ডাকি,

গেল ডাকি সুদূর দিগন্তরে

ভাবনাকে মোর ধাওয়ায়

সাগরপারের হাওয়ায় হাওয়ায় হাওয়ায়।

স্বপনবলাকা মেলেছে পাখা,

আমায় বেঁধেছে কে সোনার পিঞ্জরে ঘরে॥
রাগ: মিশ্র ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১০ অগ্রহায়ণ, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৬ নভেম্বর, ১৯৩৮
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
==========================================
গভীর রজনী নামিল হৃদয়ে, আর কোলাহল নাই।

রহি রহি শুধু সুদূর সিন্ধুর ধ্বনি শুনিবারে পাই ॥

সকল বাসনা চিত্তে এল ফিরে, নিবিড় আঁধার ঘনালো বাহিরে--

প্রদীপ একটি নিভৃত অন্তরে জ্বলিতেছে এক ঠাঁই ॥

অসীম মঙ্গলে মিলিল মাধুরী, খেলা হল সমাধান।

চপল চঞ্চল লহরীলীলা পারাবারে অবসান।

নীরব মন্ত্রে হৃদয়মাঝে শান্তি শান্তি শান্তি বাজে,

অরূপকান্তি নিরখি অন্তরে মুদিতলোচনে চাই ॥

রাগ: পরজ
তাল: রূপকড়া
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1309
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1903
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন
==============================================
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন--

আমার ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন ॥

যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায় আপন কুলায়-মাঝে,

সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,

তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন--

আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥

অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন-ডোরে,

মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ'রে।

যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে একে একে তারা,

আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা,

অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন--

আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥


রাগ: মিশ্র ভীমপলশ্রী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১৩২৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================
ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে

ও বন্ধু আমার!

না পেয়ে তোমার দেখা, একা একা দিন যে আমার কাটে না রে ॥

বুঝি গো রাত পোহালো,

বুঝি ওই রবির আলো

আভাসে দেখা দিল গগন-পারে--

সমুখে ওই হেরি পথ, তোমার কি রথ পৌঁছবে না মোর-দুয়ারে ॥

আকাশের যত তারা

চেয়ে রয় নিমেষহারা,

বসে রয় রাত-প্রভাতের পথের ধারে।

তোমারি দেখা পেলে সকল ফেলে ডুববে আলোক-পারাবারে।

প্রভাতের পথিক সবে

এল কি কলরবে--

গেল কি গান গেয়ে ওই সারে সারে!

বুঝি-বা ফুল ফুটেছে, সুর উঠেছে অরুণবীণার তারে তারে ॥


রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২০ পৌষ, ১৩২৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
রচনাস্থান: কলকাতা
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে।

কুঞ্জপথে, সখি, কৈসে যাওব অবলা কামিনী রে।

উন্মদ পবনে যমুনা তর্জিত, ঘন ঘন গর্জিত মেহ।

দমকত বিদ্যুত, পথতরু লুন্ঠিত, থরহর কম্পিত দেহ

ঘন ঘন রিম্‌ ঝিম্‌ রিম্‌ ঝিম্‌ রিম্‌ ঝিম্‌ বরখত নীরদপুঞ্জ।

শাল-পিয়ালে তাল-তমালে নিবিড়তিমিরময় কুঞ্জ।

কহ রে সজনী, এ দুরুযোগে কুঞ্জে নিরদয় কান

দারুণ বাঁশী কাহ বজায়ত সকরুণ রাধা নাম।

মোতিম হারে বেশ বনা দে, সীঁথি লগা দে ভালে।

উরহি বিলুন্ঠিত লোল চিকুর মম বাঁধহ চম্পকমালে।

গহন রয়নমে ন যাও, বালা, নওলকিশোরক পাশ।

গরজে ঘন ঘন, বহু ডর পাওব, কহে ভানু তব দাস।

রাগ: পিলু-মল্লার
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১২৮৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1878
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=======================================
আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী।

তুমি থাক সিন্ধুপারে ওগো বিদেশিনী॥

তোমায় দেখেছি শারদপ্রাতে, তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে,

তোমায় দেখেছি হৃদি-মাঝারে ওগো বিদেশিনী।

আমি আকাশে পাতিয়া কান শুনেছি শুনেছি তোমারি গান,

আমি তোমারে সঁপেছি প্রাণ ওগো বিদেশিনী।

ভুবন ভ্রমিয়া শেষে আমি এসেছি নূতন দেশে,

আমি অতিথি তোমারি দ্বারে ওগো বিদেশিনী॥

রাগ: খাম্বাজ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ আশ্বিন, ১৩০২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1895
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সরলা দেবী
=============================================
হে নিখিলভারধারণ বিশ্ববিধাতা,

হে বলদাতা মহাকালরথসারথি ॥

তব নামজপমালা গাঁথে রবি শশী তারা,

অনন্ত দেশ কাল জপে দিবারাতি ॥

রাগ: গৌড়
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1911
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
========================================
মধুর রূপে বিরাজ হে বিশ্বরাজ,

শোভন সভা নিরখি মন প্রাণ ভুলে ॥

নীরব নিশি সুন্দর, বিমল নীলাম্বর,

শুচিরুচির চন্দ্রকলা চরণমূলে ॥

রাগ: তিলক কামোদ
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ভাদ্র, ১৩০৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1895
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন
=========================================
ধীরে ধীরে প্রাণে আমার এসো হে,

মধুর হাসিয়ে ভালোবেসো হে ।।

হৃদয়কাননে ফুল ফুটাও। আধো নয়নে, সখী, চাও চাও—

পরান কাঁদিয়ে দিয়ে হাসিখানি হেসো হে ।।


রাগ: বেহাগ-খাম্বাজ
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1290
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
==========================================
তোমার এই মাধুরী ছাপিয়ে আকাশ ঝরবে,

আমার প্রাণে নইলে সে কি কোথাও ধরবে?।

এই-যে আলো সূর্য গ্রহে তারায় ঝ'রে পড়ে শতলক্ষ ধারায়,

পূর্ণ হবে এ প্রাণ যখন ভরবে ॥

তোমার ফুলে যে রঙ ঘুমের মতো লাগল

আমার মনে লেগে তবে সে যে জাগল গো।

যে প্রেম কাঁপায় বিশ্ববীণায় পুলকে সঙ্গীতে সে উঠবে ভেসে পলকে

যে দিন আমার সকল হৃদয় হরবে ॥

রাগ: বেহাগ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১ আশ্বিন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: সুরুল
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
যদি জানতেম আমার কিসের ব্যথা তোমায় জানাতাম।

কে যে আমায় কাঁদায় আমি কী জানি তার নাম॥

কোথায় যে হাত বাড়াই মিছে, ফিরি আমি কাহার পিছে--

সব যেন মোর বিকিয়েছে, পাই নি তাহার দাম॥

এই বেদনার ধন সে কোথায় ভাবি জনম ধ'রে।

ভুবন ভরে আছে যেন, পাই নে জীবন ভরে।

সুখ যারে কয় সকল জনে বাজাই তারে ক্ষণে ক্ষণে--

গভীর সুরে "চাই নে' "চাই নে' বাজে অবিশ্রাম॥

রাগ: রামকেলী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১২ ফাল্গুন, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৪
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
==========================================
বলি, ও আমার গোলাপ-বালা, বলি, ও আমার গোলাপ-বালা --

তোলো মুখানি, তোলো মুখানি--কুসুমকুঞ্জ করো আলা

বলি, কিসের শরম এত! সখী, কিসের শরম এত!

সখী, পাতার মাঝারে লুকায়ে মুখানি কিসের শরম এত।

বালা, ঘুমায়ে পড়েছে ধরা। সখী, ঘুমায় চন্দ্রতারা।

প্রিয়ে, ঘুমায় দিক্‌বালারা সবে -- ঘুমায় জগৎ যত।

বলিতে মনের কথা, সখী, এমন সময় কোথা।

প্রিয়ে, তোলো মুখানি, আছে গো আমার প্রাণের কথা কত।

আমি এমন সুধীর স্বরে, সখী, কহিব তোমার কানে --

প্রিয়ে, স্বপনের মতো সে কথা আসিয়ে পশিবে তোমার প্রাণে।

তবে মুখানি তুলিয়ে চাও, সুধীরে মুখানি তুলিয়ে চাও।

সখী, একটি চুম্বন দাও-- গোপনে একটি চুম্বন দাও॥

রাগ: বেহাগ
তাল: খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1285
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1878
=========================================
কোন্‌ পুরাতন প্রাণের টানে

ছুটেছে মন মাটির পানে॥

চোখ ডুবে যায় নবীন ঘাসে, ভাবনা ভাসে পুব-বাতাসে--

মল্লারগান প্লাবন জাগায় মনের মধ্যে শ্রাবণ-গানে॥

লাগল যে দোল বনের মাঝে

অঙ্গে সে মোর দেয় দোলা যে।

যে বাণী ওই ধানের ক্ষেতে আকুল হল অঙ্কুরেতে

আজ এই মেঘের শ্যামল মায়ায়

সেই বাণী মোর সুরে আনে॥

রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৩ শ্রাবণ, ১৩৩৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৯ জুলাই, ১৯২৯
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

=============================================== 

No comments:

Post a Comment