Monday 5 August 2013

~~বিস্মরণ~~


 
শঙ্খচূড় সাপের মাথায় বৈ্দুর্য্যমণির আলোকচ্ছটা্য়
ভোর হয়ে আসে নিভৃত নিরালা নির্বাসনে।
হরিদ্রাভ সকাল নেচে ওঠে অরণ্যের ঝিমধরা সুবাসে,
সবুজের সমারোহে প্রজাপতি ডানায় নেচে চলে সময়ের রথ।
পুষ্প কাননে ঝিরি ঝিরি দখিনা সমীরণ।

একরাশ ভালোলাগা হাতে হাত হেটে চলে দুর্বাঘাসের মেঠোপথে,
ভুলে যাওয়া প্রনয় ফিরে আসে স্মৃতিতে মেঘমেদুর অশ্রুবর্ষনে,
পথ কেটে নেয় অলিগলি কানামাছি স্বয়্ম্ভু জীবনে।
ভোকাট্টা ঘুড়ির মতো দিশাহীন বিভ্রান্ত এলোমেলো বিস্মরণ।

তবু আজ তোমার শুভ্র একচিলতে হাসি
পেজা পেজা সুখ ছড়ায়
রৌদ্রস্নাত আমার মনের নীলাকাশে।।
===========================================

~~ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধাا~~

 
কতই'তো শুনেছি রক্তের কান্না এমনতো শুনিনি
কতই'তো দেখেছি চেতনার ক্ষিপ্ত এমনতো দেখিনি
বিক্ষুদ্ধ জনতার একেমন পদধ্বনি?
বৃদ্ধ কিশোর নওজোয়ানের ভাষায় শুনি
চির উদ্দীপ্ত বাংলা ভাষার জয়ের বাণী ।

মা বলছে খোকা যা তুই ওরা আমার মুখের ভাষা
কাইড়া নিতে চায়, দানবের মোহে আমার প্রিয় বাংলা
ভাষা লুন্ঠিত প্রায় । বোন বলছে ভাষার জন্য জীবন
দিব তবুও মাতৃভাষা বাংলা নিব !
বোনের মুখে ভাষার দাবি, মায়ের চোখে জল
উদ্যত বীর পিতা পুত্র ভাষার শত্রু করিতে নিধন ।

বিপ্লবী পিতা গেল ছেলে নিয়ে ফিরে আর এলোনা
মায়ের চোখের অশ্রু তাই আজব্দী থামেনা;
কেঁদনা মা, ভাষা শহীদের রক্ত বৃথার নয় !
এভাবেই কালজয়ী হানাহানি অতঃপর ভাষার জয়
বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলার ছেলে শহীদ হয় !
শুনেছি কত কান্না আমি মায়ের মুখের আহাজারি
আজ সেই দিনটি আবার অমর ২১শে ফেব্রয়ারী ।
==============================================

~~লুকোচুরি খেলা।~~

চেতনার
জমাটবাধা নৈকট্যে ইতিহাসের মতো
প্রতিদিন ট্রেন আসে যায়
তখন পদাঘাতের প্রশ্নে কাঁপে
ট্রেনের বর্ণময় বুক
লক্ষ্য করেছি ষ্টেশনের কাছাকাছি
এখানে ওখানে মাছিদের ঘূর্ণন
সময়কে দিনরাত ব্যাখ্যা করে যায়
কাকে কি যেন বলতে চায়
ষ্টেশনের বাহুগুলোতে পাশের
পাহাড়ের
মাটির হালকা চাপ
কি যেন বলতে চায়
শেষ বেলার সূর্যের ক্লান্ত আলো
আমাদের কেউ কেউ সে ভাষা বুঝি
সকলে নয়
অসহায় মানুষের
ভাংগা ভাংগা ঘুমের গন্ধে
যখন আন্তর্জাতিক কুকুরেরা স্থান
বদলায়
তখন এক ষ্টেশন থেকে ট্রেন
আরেক ষ্টেশনে যায়
তারপর ষ্টেশন ট্রেন গাছপালা
আর আকাশ এসে এক
লাইনে দাড়াঁয়
এভাবে চলতেই থাকে মানুষের
সাথে ট্রেন
ও ষ্টেশনের লুকোচুরি খেলা।
============================================
~~অভিমানী ভালবাসা~~
 

যদি বিতৃষ্ণাতে পুড়ে যায় মনউদ্যান

যদি শ্যাওলা জমে তৃষিত অশ্রুস্নান

যদি খরাদীণর্ হয় হৃদয়ের প্রসস্থ ভূমি

যদি শীতল হাওয়া হয়ে যায় উদাসীন

যদি কান্নার রোলে ভাসে অন্তরাত্মা

যদি বেদনায় ভেঙ্গে যায় মনের দু'কূল

যদি আর দেখা নাই বা হয় এ ধরায়

যদি অকালেই হারিয়ে যাই অজানায়

যদি মনেপড়ে কভু স্মৃতির ঝরা পাতায়

যদি শত চেষ্টাতেও ভুলতে না পারো

যদি সম্ভব হয় দু' ফোঁটা অশ্রু দিও....

আমার নিষ্প্রভ সমাধীতে,পুষ্পঞ্জলি চাইনা ।
===========================================

আবারও স্বপ্নের পুনঃজনম হোক শুধু,
এই আশ্বাস বুকে বেঁধে তোমাকে নিয়ে যাবো,
হে নারী- পাতাল পুরীর দেশে,
যেখানে ভানুমতি বসুধা ছোঁবেনা কোনদিন তোমার,
নিদ্রিত লৌকিক অঞ্চল,
সেখানে নিলয় নিভূতে তুমি হবে কেবলই,
আমার আমার..........
===========================================
আয়্না তে নিজেকে দেখতে খুব ভালো লাগে
কারন আয়্নার সামনে আমি একা?
হাত থেকে পরে যখন আয়্না টা ভেংগে যায় তখন অনেক গুলো টুকরো হয়।
তখন আর বলতে পারি না আমি একা!!
==========================================

~~একা বাজি।~~

আমাদের আয়তন অজানা
তারপরও দু'দিক থেকেই বাতাসের
চাপ আলো ধরে রাখে
দু'দিকেই রংধনু
দু'দিকেই অনেক পাতা ঝড়ে যায়
প্রতিদিন
বাতাসে আন্দোলিত
পাটক্ষেতে পাক খেয়ে
পাখির সাথে উড়ে যায়
আমাদের কাঁচ ভাংগা দৃষ্টি
আমরা কিছুই
করতে পারি না
শুধু নিজেদের নির্জনতায়
নিজেরা একা একা বাজি
ঐতিহ্যে ফিরে যাই
পাট চাষী হই
এবং মনে মনে অংক করি।
===========================================

~~রিক্সা ওয়ালা~~


ঘুম ঘুম চোখে কুয়াশা ভরা সকালে বেরিয়ে পরে ত্রিচক্র যানটি লয়ে ।
আপিস যাবেন ফুলবাবু প্রথম বাসটি চেপে ,
দেরি হলে একটু রেগে রেগে লাল আপিসবাবু ,
সকাল থেকে রাত টেনে যায় যানটি ,
তবু ঘরে নেই একটাও ফুটি করি জমান ,
যা করে আমদানি সব চলে যায় লটারি ও করালির দোকানে .
বৌ তার করে বাড়ি বাড়ি ঝি গিরি ,
সংসার টানতেই বৌয়ের জেরবার ,
রাতে সুরা পান করে যত রাগ ঝারবে বৌয়ের পিঠেতে ।
তবুও রাতে বিছানায় বৌকে করবে শোষন .
সে যে একজন রেজিস্টার রিস্কায়ালা ।
=============================================

~~একুশ পৃথিবীর অলঙ্কার~~

 

৫২ এর ভাষা আন্দোলই এ দেশের স্বাধীনতার অনুপ্রেরণা,
সেই অনুপ্রেরণাই আমাদের উপহার দিয়েছিল-
পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির। আজ-
পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করেছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বাঙালির ইতিহাস সরলরৈখিক না হলেও-
তাদের ইতিহাসে অসংখ্য উজ্জ্বল বাঁকচিহ্ন আছে,
যা অর্জনের সমৃদ্ধতায় উজ্জ্বল।
বিশ্বের চার হাজারেরও বেশি ভাষাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে,
এ স্বীকৃতি শুধু যে ভাষার স্বীকৃতি নয়! বরং
ব্যাপক স্বীকৃতির দোত্যক।
একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলাদেশের বাঙালির সম্পদ,
অমর একুশে- বাঙলির অব্যয়-অক্ষয় সম্পদ,
অমর একুশেই নিহিত বাঙলির ভাষাভিত্তিক স্বাতন্ত্র্যের বীজ।
অমর একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে-
স্বীকৃতি দেয়ার মধ্যদিয়ে
বাঙালির প্রতীকী বিজয় নির্দেশিত হয়েছে।
ভাষা শহীদদের আত্মদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে।
হাজার বছরের বাঙালির জন্য,
তাদের মাতৃভাষা বাংলার জন্য,
এর চেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে?
‌আমি মুগ্ধ, আমি প্রীত
আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে,
আমার প্রাণের কথা সব কথা
আমার ভাষায় মায়ের ভাষায় জানতে পারব
বলতে পারবো মন খোলে ঢেউয়ের মতো,
আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়েছে,
সত্যি গর্বিত আমি।
আর অবহেলা চলে না-
একুশ আমাদের অহঙ্কার,
একুশ পৃথিবীর অলঙ্কার।।
=============================================

~~~আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস- অমর একুশে এখন সমগ্র বিশ্বের তাৎপর্যমন্ডিত প্রতীক যা বাঙালির গর্ব~~~ 

ভাষা হলো মনের ভাব প্রকাশের প্রায়োগিক বাহন। 
মাতৃভাষার মাধ্যেমেই মানুষ তার মনের ভাব আদান প্রদান করে। মা ও মাতৃভাষার সঙ্গে নাড়ীর টান ও অবিচ্ছেদ্য এক নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। আমরা বাঙালি, আমাদের ভাষা বাংলা। সুতারাং বাঙালি জাতির মাতৃভাষা বাংলা।
 ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী বাঙালি জাতি তার নিজের ভাষা মাতৃভাষা মর্যদা রক্ষার্থে সংগ্রাম করেছিল। তদানীন্তন পাকিস্তানি শাসকদের অত্যাচার স্টিম রোলারের আঘাতে নিষ্পেষত হয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আর নাম না জানা অনেকে। সেই দিন ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি না পেলেও অনেক পরে প্রাদেশিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। স্বাধীনতা লাভের পর তৎকালীন সরকার এ দিনটিকে জাতীয় ভাষা বা শহীদ দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। রক্তাক্ত একুশ এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

২০০০ সাল থেকে এ দিনটি সারা বিশ্বে ভাষা দিবস হিসেবে একযোগে পালিত হওয়ার সিদ্ধান্ত ইউনেস্কো কর্তৃক গৃহীত হয়েছে।এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় মাতৃভাষার জন্য বাঙালি জাতির আত্মদান বৃথা যায়নি। ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে তা আরোও ভাস্বর হয়ে উঠেছে। মাতৃভাষার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তানি আমল পর্যন্ত ষড়যন্ত্র অব্যাহত ছিল। ১৯৪৭ সাল থেকে দেশ ভাগের পূর্ব থেকেই বাংলা ভাষাকে লড়াইয়ে নামতে হয়। আর এর প্রতিপক্ষ ছিল উর্দু। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড. জিয়া উদ্দিন আহম্মদ প্রথম বাংলাকে উর্দুর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে তিনি বলেছিলেন, ভারত যেমন হিন্দি রাষ্ট্রভাষা হতে যাচ্ছে, পাকিস্তানেও তেমনিই উর্দুই রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। এর বিরুদ্ধে তাৎকনিক শুরু হয় প্রতিবাদ এবং বাংলার জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ -‌দৈনিক আজাদ-এ এক প্রবন্ধে বলেন, অধিকাংশ জনসংখ্যার ভাষা হিসেবে বাংলাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া ইচিত।১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেখা যায়, পাকিস্তানের কোন অঞ্চলের মানুষেরই মাতৃভাষা উর্দু নয়। পাকিস্তান জন্মের ৩ মাসের মধ্যে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে করাচি শিক্ষা সম্মেলনে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের উদ্যোগে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার একটি প্রস্তাব পাস করানো হয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সুদূরপ্রসারী এবং ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকার রাজপথে তৎকালীন পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ এর বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলনের মুখে পূর্ব বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ছাত্রদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার মর্যদার প্রশ্নটি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী ঢাকার পল্টন ময়দানে খাজা নাজিম উদ্দিনই মুসলীম লীগের এক জনসভার ভাষণে আবার ভাষা বিদ্রোহী উস্কে দেন। তিনি বলেছিলেন, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এর ফল হয়েছিল ভয়াবহ এবং ধ্বংসাত্মক। একই বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি বুকের রক্ত দিয়ে ছাত্র সমাজ প্রিয় মাতৃভাষার মর্যদা ও স্বীকৃতিকে আদায় করে নিয়েছিল। বিস্মৃত হতে হয় আজ সেই ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তৎকালীন বাঙালিদের চেতনার পরিপক্বতা দেখে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলই এ দেশের স্বাধীনতার অনুপ্রেরণা।
সেই অনুপ্রেরণাই আমাদের উপহার দিয়েছিল পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির ৭১-এর রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা। আজ পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো যে চেতনায় প্রস্তাবনা পাস করেছে, ৫২ সালে তৎকালীন ভাষা সংগ্রামীরা সেই প্রেরণাকেই নাগিরকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। আর তা হলো সব মাতৃভাষার মর্যদা ও স্বীকৃতি। বাঙালির ইতিহাস সরলরৈখিক না হলেও তাদের ইতিহাসে অসংখ্য উজ্জ্বল বাঁকচিহ্ন আছে। যা অর্জনের সমৃদ্ধতায় উজ্জ্বল। এমনি একটি বাঁকচিহ্ন নিঃসন্দেহ ১৯৯৯-এর ১৭ নবেম্ভর। ইউনেস্কোর সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারির স্বীকৃতি বাঙালির জন্য এ উজ্জ্বল বাঁকচিহ্নের সূচক। বিশেষ ভাবে এ সিদ্ধান্তের দুটি বিবেচ্য বিষয় হলো (১) আন্তর্জাতিক (২) আমাদের ক্ষেত্রে দৈশিক। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্বের ৪ হাজারেরও ওপর ভাষাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এ স্বীকৃতি শুধু যে ভাষার স্বীকৃতি নয় বরং আরও ব্যাপক স্বীকৃতির দোত্যক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলাদেশের বাঙালির সম্পদ অমর একুশে বাঙলির অব্যয়-অক্ষয় সম্পদ। অমর একুশেই নিহিত বাঙলির ভাষাভিত্তিক স্বাতন্ত্র্যের বীজ। অতএব, অমর একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্যদিয়ে বাঙালির প্রতীকী বিজয় নির্দেশিত হয়েছে। ভাষা শহীদদের আত্মদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে। হাজার বছরের বাঙালির জন্য, তাদের মাতৃভাষা বাংলার জন্য, এর চেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে? অমর একুশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হওয়ার মধ্যে যে প্রতীকী তাৎপর্য তা অসাধারণ তাৎপর্য। অমর একুশে এখন সমগ্র বিশ্বের তাৎপর্যমন্ডিত প্রতীক যা বাঙালির গর্ব আর অহঙ্কারেরই দ্যোতক এবং এক বিরাট গৌরব। বিশ্বের সব মানুষ বাংলাদেশ নামে একটি দেশের কথা, বাঙালি জাতি ও ভাষার কথা জানতে পারবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পালন করবে একটি বিরাট ভূমিকা। বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী হুময়ুন আজাদ বলেছিলেন-
‌আমি মুগ্ধ, আমি প্রীত আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আমার প্রাণের কথা আমার ভাষায় জানতে পারব বলে আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়েছে, সত্যি গর্বিত আমি।
জাতিসংঘের ইউনোস্কো সংস্থা ২০০০ সাল থেকে বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সব সদস্য দেশের কাছে মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের জন্য একটি তারিখ নির্ণয়ের সুপারিশ আহ্বান করে। এ সময় বাংলাদেশও দিবসটি পালনের তাৎপর্য জাতিসংঘে উপস্থাপন করে এবং ভাষা দিবসের জন্য সবচেয়ে গৌরবজনক তারিখটি উপস্থাপন করে। যেহেতু ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে, যুদ্ধ করেছে একমাত্র বাঙালিরা। তাই, এই রক্ত দান, আত্মাহুতির কারণেই বাংলাদেশের প্রস্তাবিত তারিখটিকেই জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি দেয়। বাংলা ভাষাকে অবহেলা করা চলে না। কারণ এ ভাষাতেই রয়েছে বৈজ্ঞানিক উপাদানের সমারোহ। বাংলা ভাষা পৃথিবীর অষ্টম প্রধান ভাষা। যাকে মর্যাদার স্থানে উপনীত করার জন্য লড়েছেন ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আবদুল হাই, ড. আনোয়ার পাশা, ড. কাজী দীন মুহাম্মদ প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের দেশ হলেও তার ভাষা তাকে সুউচ্চ অদ্রির শিখরে পদাপের্ণ সহায়তা করেছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি পাওয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম উৎসবের আয়োজন করে। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে উৎসবটি পালিত হয়। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দিনভর আনন্দ, শোভযাত্রা, একুশ আমাদের অহঙ্কার, একুশ পৃথিবীর অলঙ্কার ইত্যাদি শ্লোগান, আলোচনা, আবৃত্তি, নাচ-গান ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ যোগদান করে। তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সুবীর নন্দীর গানের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। এরপর আলোচনা সভা শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল ও ১১.১৫ মিনিটে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে সন্ধ্যায় পল্টনেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হয় আনন্দ উৎসবের।
একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মর্যদা লাভ করায় বাঙালি ভাষা শহীদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সারাদেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ছুটে যায় শহীদ মিনারে। মহান একুশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভাষা দিবস হিসেবে। বাংলাদেশের বাইরে ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত শহীদ মিনারের অনুরূপ শহীদ মিনার করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে থাকেন। আমরা এখন গর্ব করে বলতে পারি বাঙালিরাই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দিতে দ্বিধা করেনি। বিশ্ববাসী স্বীকৃতি দিয়েছে আমাদের মাতৃভাষাকে। জাতিসংঘের মহাসচিব এ দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শুভেচ্ছা বার্তা প্রেরণ করেন। এ দিবসটি পালনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী তাদের জাতিসত্তার প্রধান বিবেচ্য বিষয় মাতৃভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। বহির্শক্তির আক্রমণ থেকে মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য বিশ্ববাসী আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠবে।
একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি তাই মাতৃভাষা রক্ষার প্রতীক হয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্বও অপরিসীম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি প্রথমবারে বিশ্বের প্রায় ১৮৮টি দেশ পালন করেছে। ফলে তারা বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য সভ্যতাকে জানতে আগ্রহী হবে। বাংলার বিখ্যাত সব কবি সাহিত্যিকের সৃষ্টি সম্পর্কে জানবে। বিশ্বের দরবারে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি একটি বিশিষ্ট স্থান লাভ করবে। বিশ্ব জানবে বাঙালিই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছে, শহীদ হয়েছে। তাই বাংলার ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। ফলে আমাদের মাতৃভাষা, শিক্ষা-সংস্কৃতি-সভ্যতার সঙ্গে বিশ্ববাসীদের সেতুবন্ধন তৈরি হবে। বিশ শতকের শেষ প্রান্তে এসে জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো মাতৃভাষাগুলোর অধিকার এবং একে মর্যাদাপূর্ণভাবে টিকিয়ে রাখতে যে অনন্য সাধারণ সংগ্রামের সূচনা করল, তা সমগ্র বিশ্বের ভাষা প্রবাহে অসামান্য অবদান রাখবে। একই সঙ্গে এ দিন বিশ্বের বৃহৎ ভাষাগুলোর পাশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিপীড়িত অবহেলিত ভাষাগুলোও সংঘবদ্ধভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবে। কাল থেকে কালান্তরে বাঙালি জাতির ও তার মাতৃভাষার প্রতি জাতির দায়িত্ব শত গুণে বেড়ে গেল।
===============================================================
মহান একুশে ফেব্রুয়ারী,
অমর হোক অমর হোক।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস,
অমর হোক অমর হোক।
বাঙালীর এ গর্ব যাদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত,
 সে সকল ভাষা শহীদদের জানাই অন্তরের অন্তস্হল থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও লাল সালাম।
=================================================

~~কবিতা বোঝে না~~

 
চোখো ঘুম আসে না,
আসে কবিতার কল্পনা
স্বপ্নেরা ব্রা পরে,ছায়া পোশাকে
রুমালে ঘামের গন্ধ মেখে
কে আসে! ঝলমল করে
ফিরেই দেখি নেইতো,
পদ্মার ঢেউয়ে বাতাসের গায়ে
চুলের বেণী উড়িয়ে এসে-
যেন মন ছুঁয়ে যায়,
বুকে ধাক্কা দিওনা চাঁদবদনী
ওবুকে কবিতা ঘুমায়,
কবিতা খিলখিল হেসে বেড়ায়,
জলকণা রাতে নীরবে পালায়।
স্মৃতির রুমালে জেগে থাকে,
শব্দের ভালবাসা সেলাই করি-
কবিতার বুকে চোরাচোখে,
কবিতার জলকণা আমাকে-
ওর নক্ষত্রে ঘুমোতে বলে।
ওর বুকের ওমে আমি
শুধু জেগে থাকি আর
রঙ দিয়ে কবিতাকে সাজাই।
ঘুম আসে না, ঘুম আসেই না,
ঘুমের দাওয়া খুঁজি আর কবিতা।
কবিতা প্রতিদিন এসে ফিরে যায়,
স্বপ্নের রুমাল উড়িয়ে,অদৃশ্যে,
আমি শুধু বলি রোগা বুকে
কবিতা আমার বুকে আরেকটু থাক,
থেকে যাও আরেকটু থেকে যাও,
না! কবিতা যায় ,ফিরেই যায়,
মেঘের কপালে স্মৃতির জলকণা,
পাতায় পাতায় কবিতার পাণ্ডুলিপিতে
নতুন ভোরের সূর্য আঁকে।
কবিতা বোঝে না বোঝেই না
কবির বিষাদময় জীবনের গাথা।
কবিতা বোঝে না বোঝেই না
কত রক্তক্ষরণে জন্ম হয়েছিল তার,
কবিতা বোঝে না বোঝেই না
সাদাপাতা বুকে খোলা খাতা তারই পদচিহ্নে
অক্ষর সাজানোর জন্য কবি সৃজনে
কতকাল তার জীবন উৎসর্গ করেছে।
কবিতা বোঝে না বোঝেই না
উথাল পাথাল নদীতে ঝুঁকিতে
কতটা সাঁতরে পেরোতে পেরোতে
পারের ঠিকানা পায় কবি!
কবিতা বোঝে না বোঝেই না
কবির বুকের প্রেম জ্বালা
জলন্ত চিতার আগুন তাইতো-কবিতা।
=================================================





No comments:

Post a Comment