Wednesday 21 August 2013


আমার মনের কোণের বাইরে

আমি জানলা খুলে ক্ষণে ক্ষণে চাই রে॥

কোন্‌ অনেক দূরে উদাস সুরে

আভাস যে কার পাই রে--

আছে-আছে নাই রে॥

আমার দুই আঁখি হল হারা,

কোন্‌ গগনে খোঁজে কোন্‌ সন্ধ্যাতারা।

কার ছায়া আমায় ছুঁয়ে যে যায়,

কাঁপে হৃদয় তাই রে--

গুন্‌গুনিয়ে গাই রে॥

রাগ: কাফি
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1328
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1921
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================
দীর্ঘ জীবনপথ, কত দুঃখতাপ, কত শোকদহন--

গেয়ে চলি তবু তাঁর করুণার গান ॥

খুলে রেখেছেন তাঁর অমৃতভবনদ্বার--

শ্রান্তি ঘুচিবে, অশ্রু মুছিবে, এ পথের হবে অবসান ॥

অনন্তের পানে চাহি আনন্দের গান গাহি--

ক্ষুদ্র শোকতাপ নাহি নাহি রে।

অনন্ত আলয় যার কিসের ভাবনা তার--

নিমেষের তুচ্ছ ভারে হব না রে ম্রিয়মাণ ॥

রাগ: আশাবরী
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৮ বৈশাখ, ১২৯২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
==========================================
আমি যখন তাঁর দুয়ারে ভিক্ষা নিতে যাই তখন যাহা পাই

সে যে আমি হারাই বারে বারে ॥

তিনি যখন ভিক্ষা নিতে আসেন আমার দ্বারে

বন্ধ তালা ভেঙে দেখি আপন-মাঝে গোপন রতনভার,

হারায় না সে আর ॥

প্রভাত আসে তাঁহার কাছে আলোক ভিক্ষা নিতে,

সে আলো তার লুটায় ধরণীতে।

তিনি যখন সন্ধ্যা-কাছে দাঁড়ান ঊর্ধ্বকরে, তখন স্তরে স্তরে

ফুটে ওঠে অন্ধকারের আপন প্রাণের ধন--

মুকুটে তাঁর পরেন সে রতন ॥

রাগ: পিলু
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ পৌষ, ১৩২৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১ জানুয়ারি, ১৯১৮
রচনাস্থান: কলকাতা
=============================================
আমি তারেই খুঁজে বেড়াই যে রয় মনে, আমার মনে।

সে আছে ব'লে

আমার আকাশ জুড়ে ফোটে তারা রাতে,

প্রাতে ফুল ফুটে রয় বনে আমার বনে॥

সে আছে ব'লে চোখের তারার আলোয়

এত রূপের খেলা রঙের মেলা অসীম সাদায় কালোয়,

সে মোর সঙ্গে থাকে বলে

আমার অঙ্গে অঙ্গে পুলক লাগায় দখিন সমীরণে।

তারি বাণী হঠাৎ উঠে পুরে

আনমনা কোন্‌ তানের মাঝে আমার গানের সুরে।

দুখের দোলে হঠাৎ মোরে দোলায়

কাজের মাঝে লুকিয়ে থেকে আমারে কাজ ভোলায়।

সে মোর চিরদিনের ব'লে

তারি পুলকে মোর পলকগুলি ভরে ক্ষণে ক্ষণে॥

রাগ: কালাংড়া
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): চৈত্র, ১৩২৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1919
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================================
আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না।

এই জানারই সঙ্গে সঙ্গে তোমায় চেনা ॥

কত জনম-মরণেতে তোমারি ওই চরণেতে

আপনাকে যে দেব, তবু বাড়বে দেনা ॥

আমারে যে নামতে হবে ঘাটে ঘাটে,

বারে বারে এই ভুবনের প্রাণের হাটে।

ব্যাবসা মোর তোমার সাথে চলবে বেড়ে দিনে রাতে,

আপনা নিয়ে করব যতই বেচা কেনা ॥

রাগ: ভৈরবী-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
===========================================
হৃদয়ের এ কূল, ও কূল, দু কূল ভেসে যায়, হায় সজনি,

উথলে নয়নবারি।

যে দিকে চেয়ে দেখি ওগো সখী,

কিছু আর চিনিতে না পারি॥

পরানে পড়িয়াছে টান,

ভরা নদীতে আসে বান,

আজিকে কী ঘোর তুফান সজনি গো,

বাঁধ আর বাঁধিতে নারি॥

পরানে পড়িয়াছে টান,

ভরা নদীতে আসে বান,

আজিকে কী ঘোর তুফান সজনি গো,

বাঁধ আর বাঁধিতে নারি॥

কেন এমন হল গো, আমার এই নবযৌবনে।

সহসা কী বহিল কোথাকার কোন্‌ পবনে।

হৃদয় আপনি উদাস, মরমে কিসের হুতাশ--

জানি না কী বাসনা, কী বেদনা গো--

কেমনে আপনা নিবারি॥

রাগ: বিভাস-কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1300
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১০ জুলাই, ১৮৯৩
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
প্রাণে গান নাই, মিছে তাই ফিরিনু যে

বাঁশিতে সে গান খুঁজে।

প্রেমেরে বিদায় ক'রে দেশান্তরে

বেলা যায় কারে পূজে॥

বনে তোর লাগাস আগুন, তবে ফাগুন কিসের তরে--

বৃথা তোর ভস্ম-'পরে মরিস যুঝে ॥

ওরে, তোর নিবিয়ে দিয়ে ঘরের বাতি

কী লাগি ফিরিস পথে দিবারাতি--

যে আলো শতধারায় আঁখিতারায় পড়ে ঝ'রে

তাহারে কে পায় ওরে নয়ন বুজে?।

রাগ: মিশ্র ছায়ানট
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৬ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৯ এপ্রিল, ১৯১৪
রচনাস্থান: কলকাতা
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
========================================
নাই রস নাই, দারুণ দাহনবেলা। খেলো খেলো তব নীরব ভৈরব খেলা ॥

যদি ঝ'রে পড়ে পড়ুক পাতা, ম্লান হয়ে যাক মালা গাঁথা,

থাক্‌ জনহীন পথে পথে মরীচিকাজাল ফেলা ॥

শুষ্ক ধুলায় খসে-পড়া ফুলদলে ঘূর্ণী-আঁচল উড়াও আকাশতলে।

প্রাণ যদি কর মরুসম তবে তাই হোক-- হে নির্মম,

তুমি একা আর আমি একা, কঠোর মিলনমেলা ॥

রাগ: মূলতান
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1332
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1925
===========================================
কেন পান্থ, এ চঞ্চলতা।

কোন্‌ শূন্য হতে এল কার বারতা ॥

নয়ন কিসের প্রতীক্ষা-রত বিদায়বিষাদে উদাসমত--

ঘনকুন্তলভার ললাটে নত, ক্লান্ত তড়িতবধু তন্দ্রাগতা ॥

কেশরকীর্ণ কদম্ববনে মর্মরমুখরিত মৃদুপবনে

বর্ষণহর্ষ-ভরা ধরণীর বিরহবিশঙ্কিত করুণ কথা।

ধৈর্য মানো ওগো, ধৈর্য মানো! বরমাল্য গলে তব হয় নি ম্লান'

আজও হয় নি ম্লান'--

ফুলগন্ধনিবেদনবেদনসুন্দর মালতী তব চরণে প্রণতা ॥

রাগ: কাফি
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৪ ফাল্গুন, ১৩৩৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৭
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
ও কেন চুরি ক'রে চায়।

নুকোতে গিয়ে হাসি হেসে পালায়।

বনপথে ফুলের মেলা, হেলে দুলে করে খেলা--

চকিতে সে চমকিয়ে কোথা দিয়ে যায়॥

কী যেন গানের মতো বেজেছে কানের কাছে,

যেন তার প্রাণের কথা আধেকখানি শোনা গেছে।

পথেতে যেতে চ'লে মালাটি গেছে ফেলে--

পরানের আশাগুলি গাঁথা যেন তায়॥

রাগ: মিশ্র বেহাগ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1290
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
==========================================
আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার

পরানসখা বন্ধু হে আমার॥

আকাশ কাঁদে হতাশ-সম, নাই যে ঘুম নয়নে মম--

দুয়ার খুলি হে প্রিয়তম, চাই যে বারে বার॥

বাহিরে কিছু দেখিতে নাহি পাই,

তোমার পথ কোথায় ভাবি তাই।

সুদূর কোন্‌ নদীর পারে, গহন কোন্‌ বনের ধারে

গভীর কোন্‌ অন্ধকারে হতেছ তুমি পার॥

রাগ: মল্লার
তাল: ঝম্পক
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): শ্রাবণ, ১৩১৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1909
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
============================================
সুখহীন নিশিদিন পরাধীন হয়ে ভ্রমিছ দীনপ্রাণে।

সতত হায় ভাবনা শত শত, নিয়ত ভীত পীড়িত--

শির নত কত অপমানে ॥

জানো না রে অধ-ঊর্ধ্বে বাহির-অন্তরে

ঘেরি তোরে নিত্য বাজে সেই অভয়-আশ্রয়।

তোলো আনত শির, ত্যজো রে ভয়ভার,

সতত সরলচিতে চাহো তাঁরি প্রেমমুখপানে ॥

রাগ: নট-মল্লার
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1306
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1899
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
==========================================
তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি।

বুঝতে নারি কখন্‌ তুমি দাও-যে ফাঁকি ॥

ফুলের মালা দীপের আলো ধূপের ধোঁওয়ার

পিছন হতে পাই নে সুযোগ চরণ-ছোঁওয়ার,

স্তবের বাণীর আড়াল টানি তোমায় ঢাকি ॥

দেখব ব'লে এই আয়োজন মিথ্যা রাখি,

আছে তো মোর তৃষা-কাতর আপন আঁখি।

কাজ কী আমার মন্দিরেতে আনাগোনায়--

পাতব আসন আপন মনের একটি কোণায়,

সরল প্রাণে নীরব হয়ে তোমায় ডাকি ॥

রাগ: পিলু
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৪ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
==========================================
হল না লো, হল না, সই, হায়--

মরমে মরমে লুকানো রহিল, বলা হল না।

বলি বলি বলি তারে কত মনে করিনু--

হল না লো, হল না সই॥

না কিছু কহিল, চাহিয়া রহিল,

গেল সে চলিয়া, আর সে ফিরিল না।

ফিরাব ফিরাব ব'লে কত মনে করিনু--

হল না লো, হল না সই॥

রাগ: মিশ্র হাম্বীর-কীর্তন
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
=========================================
হৃদয়ের মণি আদরিণী মোর, আয় লো কাছে আয়।

মিশাবি জোছনাহাসি রাশি রাশি মৃদু মধু জোছনায়।

মলয় কপোল চুমে ঢলিয়া পড়িছে ঘুমে,

কপোলে নয়নে জোছনা মরিয়া যায়।

যমুনালহরীগুলি চরণে কাঁদিতে চায়॥

রাগ: খাম্বাজ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
=========================================
মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো,

দোলে মন দোলে অকারণ হরষে।

হৃদয়গগনে সজল ঘন নবীন মেঘে

রসের ধারা বরষে॥

তাহারে দেখি না যে দেখি না,

শুধু মনে মনে ক্ষণে ক্ষণে ওই শোনা যায়

বাজে অলখিত তারি চরণে

রুনুরুনু রুনুরুনু নূপুরধ্বনি॥

গোপন স্বপনে ছাইল

অপরশ আঁচলের নব নীলিমা।

উড়ে যায় বাদলের এই বাতাসে

তার ছায়াময় এলো কেশ আকাশে।

সে যে মন মোর দিল আকুলি

জল-ভেজা কেতকীর দূর সুবাসে॥

রাগ: গৌড়মল্লার
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ ভাদ্র, ১৩৪৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৯ অগাস্ট, ১৯২৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
===========================================
নূপুর বেজে যায় রিনিরিনি।

আমার মন কয়, চিনি চিনি॥

গন্ধ রেখে যায় মধুবায়ে মাধবীবিতানের ছায়ে ছায়ে,

ধরণী শিহরায় পায়ে পায়ে, কলসে কঙ্কণে কিনিকিনি॥

পারুল শুধাইল, কে তুমি গো, অজানা কাননের মায়ামৃগ।

কামিনী ফুলকুল বরষিছে, পবন এলোচুল পরশিছে,

আঁধারে তারাগুলি হরষিছে, ঝিল্লি ঝনকিছে ঝিনিঝিনি॥

রাগ: কেদারা
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): চৈত্র, ১৩৩২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1926
স্বরলিপিকার: রমা কর, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================
ও চাঁদ, তোমায় দোলা দেবে কে!

ও চাঁদ, তোমায় দোলা--

কে দেবে কে দেবে তোমায় দোলা--

আপন আলোর স্বপন-মাঝে বিভল ভোলা॥

কেবল তোমার চোখের চাওয়ায় দোলা দিলে হাওয়ায় হাওয়ায়,

বনে বনে দোল জাগালো ওই চাহনি তুফানতোলা॥

আজ মানসের সরোবরে

কোন্‌ মাধুরীর কমলকানন দোলাও তুমি ঢেউয়ের 'পরে।

তোমার হাসির আভাস লেগে বিশ্ব-দোলন দোলার বেগে

উঠল জেগে আমার গানের কল্লোলিনী কলরোলা॥

রাগ: বসন্ত-বাহার-খাম্বাজ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২০ মাঘ, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৩
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===========================================
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে--

তুমি জান না, আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে॥

সে সাধনায় মিশিয়া যায় বকুলগন্ধ,

সে সাধনায় মিলিয়া যায় কবির ছন্দ--

তুমি জান না, ঢেকে রেখেছি তোমার নাম

রঙিন ছায়ার আচ্ছাদনে॥

তোমার অরূপ মূর্তিখানি

ফাল্গুনের আলোতে বসাই আনি।

বাঁশরি বাজাই ললিত-বসন্তে, সুদূর দিগন্তে

সোনার আভায় কাঁপে তব উত্তরী

গানের তানের সে উন্মাদনে॥

রাগ: বাহার-সোহিনী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): মার্চ, ১৯৩৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
=============================================
তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা,

মম শূন্যগগনবিহারী।

আমি আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তোমারে করেছি রচনা--

তুমি আমারি, তুমি আমারি,

মম অসীমগগনবিহারী॥

মম হৃদয়রক্তরাগে তব চরণ দিয়েছি রাঙিয়া,

অয়ি সন্ধ্যাস্বপনবিহারী।

তব অধর এঁকেছি সুধাবিষে মিশে মম সুখদুখ ভাঙিয়া--

তুমি আমারি, তুমি আমারি,

মম বিজনজীবনবিহারী॥

মম মোহের স্বপন-অঞ্জন তব নয়নে দিয়েছি পরায়ে,

অয়ি মুগ্ধনয়নবিহারী

মম সঙ্গীত তব অঙ্গে অঙ্গে দিয়েছি জড়ায়ে জড়ায়ে--

তুমি আমারি, তুমি আমারি,

মম জীবনমরণবিহারী॥
রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৯ আশ্বিন, ১৩০৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1897
রচনাস্থান: চলন বিল
স্বরলিপিকার: সরলা দেবী
=============================================
তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম

নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম॥

মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন

তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম॥

জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি,

তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি।

মম দুঃখবেদন মম সফল স্বপন

তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম॥

রাগ: বেহাগ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৮ কার্তিক, ১৩০২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1895
রচনাস্থান: জোড়াসাঁকো
=============================================

No comments:

Post a Comment