Tuesday 27 August 2013


আমার ঢালা গানের ধারা সেই তো তুমি পিয়েছিলে,

আমার গাঁথা স্বপন-মালা কখন চেয়ে নিয়েছিলে ॥

মন যবে মোর দূরে দূরে

ফিরেছিল আকাশ ঘুরে

তখন আমার ব্যথার সুরে

আভাস দিয়ে গিয়েছিলে ॥

যবে বিদায় নিয়ে যাব চলে

মিলন-পালা সাঙ্গ হলে

শরৎ-আলোয় বাদল-মেঘে

এই কথাটি রইবে লেগে--

এই শ্যামলে এই নীলিমায়

আমায় দেখা দিয়েছিলে ॥

রাগ: পিলু
তাল: ষষ্ঠী
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1332
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1925
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===============================================
আমার এই পথ-চাওয়াতেই আনন্দ।

খেলে যায় রৌদ্র ছায়া, বর্ষা আসে বসন্ত ॥

কারা এই সমুখ দিয়ে আসে যায় খবর নিয়ে,

খুশি রই আপন মনে-- বাতাস বহে সুমন্দ ॥

সারাদিন আঁখি মেলে দুয়ারে রব একা,

শুভখন হঠাৎ এলে তখনি পাব দেখা।

ততখন ক্ষণে ক্ষণে হাসি গাই আপন-মনে,

ততখন রহি রহি ভেসে আসে সুগন্ধ ॥


রাগ: খাম্বাজ-কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ চৈত্র, ১৩১৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1912
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
========================================
আজি কমলমুকুলদল খুলিল, দুলিল রে দুলিল--

মানসসরসে রসপুলকে পলকে পলকে ঢেউ তুলিল॥

গগন মগন হল গন্ধে, সমীরণ মূর্ছে আনন্দে,

গুন্‌গুন্‌ গুঞ্জনছন্দে মধুকর ঘিরি ঘিরি বন্দে--

নিখিলভুবনমন ভুলিল।

মন ভুলিল রে মন ভুলিল॥

রাগ: বাহার
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
=============================================
চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো।

ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো ॥

পাগল হাওয়া বুঝতে নারে ডাক পড়েছে কোথায় তারে--

ফুলের বনে যার পাশে যায় তারেই লাগে ভালো ॥

নীল গগনের ললাটখানি চন্দনে আজ মাখা,

বাণীবনের হংসমিথুন মেলেছে আজ পাখা।

পারিজাতের কেশর নিয়ে ধরায়, শশী, ছড়াও কী এ।

ইন্দ্রপুরীর কোন্‌ রমণী বাসরপ্রদীপ জ্বালো ॥

রাগ: পিলু
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1336
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1929
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন--

আমার ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন ॥

যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায় আপন কুলায়-মাঝে,

সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,

তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন--

আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥

অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন-ডোরে,

মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ'রে।

যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে একে একে তারা,

আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা,

অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন--

আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥


রাগ: মিশ্র ভীমপলশ্রী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১৩২৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================
আমার নিশীথরাতের বাদলধারা, এসো হে গোপনে

আমার স্বপনলোকে দিশাহারা ॥

ওগো অন্ধকারের অন্তরধন, দাও ঢেকে মোর পরান মন--

আমি চাই নে তপন, চাই নে তারা ॥

যখন সবাই মগন ঘুমের ঘোরে নিয়ো গো, নিয়ো গো,

আমার ঘুম নিয়ো গো হরণ করে।

একলা ঘরে চুপ চুপে এসো কেবল সুরের রূপে--

দিয়ো গো, দিয়ো গো,

আমার চোখের জলের দিয়ো সাড়া ॥

রাগ: বেহাগ
তাল: কাহারবা-দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১৩২২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): অক্টোবর, ১৯১৫
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া

তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া

চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি

গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।

ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের দেবতা,

কেমনে তোমারে কব প্রণয়ের কথা।

ভেবেছিনু মনে মনে দূরে দূরে থাকি

চিরজন্ম সঙ্গোপনে পূজিব একাকী--

কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়,

কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়।

আপনি আজিকে যবে শুধাইছ আসি,

কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি॥


রাগ: বিলাতি ভাঙা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
===========================================
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রঙ্গরসিকতা


একবার ভান্ডারে নামে একটি ছেলে এল শান্তি নিকেতনে । 
সে রবীন্দ্রনাথকে চেনে না । 
রবীন্দ্রনাথকে দেখেই তার কাছে ছুটে গেল এবং জোর করে তার হাতে কি যেন একটা গুজে দিল ।
একটু দুরে সৈয়দ মুজতবা আলী সমস্ত ব্যাপারটিই লক্ষ করলেন । 
কাছে আসতেই তিনি ভান্ডারেকে জিজ্ঞেস করলেন ‘ গুরুদেবকে কি দিলি ?’
ভান্ডারে বিস্ময়ের সঙ্গে উত্তর দিল -’গুরুদেব আবার কে ?
 তিনি তো একজন ফকির । 
আমি ওকে একটা আধুলি দিয়েছি । 
মা বলেছেন সাধু সন্যাসীদের দান করতে ।”
ভান্ডারে দানশীল কিন্তু শান্ত স্বভাবের নয় । 
সবাই অতিষ্ঠ এমনকি হেডমাষ্টার পর্যন্ত ।
 এক সময় ব্যাপারটি রবীন্দ্রনাথের নজরে আনা হল তিনি তো ভাল করেই জানতেন ভান্ডারেকে ।
 তাই তিনি কৌতুক মিশিয়ে বললেন ,
 “ভান্ডারে তুই সবচেয়ে ভাল ছেলে । 
তোর এই কান্ড । তুই একবার আমাকে একটা আধুলি পর্যন্ত দিয়েছিলি । 
অন্য কোন ছাত্র আমাকে কোনদিন একটা পয়সা পর্যন্ত দেয় না । 
সেই তুই কিনা গোলমাল করিস ।”
===========================================
ফুলে ফুলে ঢ'লে ঢ'লে বহে কিবা মৃদু বায়,

তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়

পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে কুহূ কুহূ কুহূ গায়,

কি জানি কিসেরি লাগি প্রাণ করে হায় হায়!


রাগ: বিলাতি ভাঙা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1289
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1882
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী
==============================================
এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে;

আমি কুড়িয়ে নিয়েছি, তোমার চরণে দিয়েছি--

লহো লহো করুণ করে॥

যখন যাব চলে ওরা ফুটবে তোমার কোলে,

তোমার মালা গাঁথার আঙুলগুলি মধুর বেদনভরে

যেন আমায় স্মরণ করে॥

বউকথাকও তন্দ্রাহারা বিফল ব্যথায় ডাক দিয়ে হয় সারা

আজি বিভোর রাতে।

দুজনের কানাকানি কথা দুজনের মিলনবিহ্বলতা,

জ্যোৎস্নাধারায় যায় ভেসে যায় দোলের পূর্ণিমাতে।

এই আভাসগুলি পড়বে মালায় গাঁথা কালকে দিনের তরে

তোমার অলস দ্বিপ্রহরে॥

রাগ: ইমন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): মার্চ, ১৯৩৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
============================================
পাতার ভেলা ভাসাই নীরে,

পিছন-পানে চাই নে ফিরে ॥

কর্ম আমার বোঝাই ফেলা, খেলা আমার চলার খেলা।

হয় নি আমার আসন মেলা, ঘর বাঁধি নি স্রোতের তীরে ॥

বাঁধন যখন বাঁধতে আসে

ভাগ্য আমার তখন হাসে।

ধুলা-ওড়া হাওয়ার ডাকে পথ যে টেনে লয় আমাকে--

নতুন নতুন বাঁকে বাঁকে গান দিয়ে যাই ধরিত্রীরে ॥

রাগ: পিলু-বৃন্দাবনী সারং
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): চৈত্র, ১৩৩২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1926
==========================================
গানের সুরের আসনখানি পাতি পথের ধারে।

ওগো পথিক, তুমি এসে বসবে বারে বারে ॥

ঐ যে তোমার ভোরের পাখি নিত্য করে ডাকাডাকি,

অরুণ-আলোর খেয়ায় যখন এস ঘাটের পারে,

মোর প্রভাতীর গানখানিতে দাঁড়াও আমার দ্বারে ॥

আজ সকালে মেঘের ছায়া লুটিয়ে পড়ে বনে,

জল ভরেছে ঐ গগনের নীল নয়নের কোণে।

আজকে এলে নতুন বেশে তালের বনে মাঠের শেষে,

অমনি চলে যেয়ো নাকো গোপনসঞ্চারে।

দাঁড়িয়ো আমার মেঘলা গানের বাদল-অন্ধকারে ॥

রাগ: কেদার-ছায়ানট
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1322
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1916
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী
===============================================
তোমায় চেয়ে আছি বসে পথের ধারে সুন্দর হে।

জমল ধুলা প্রাণের বীণার তারে তারে সুন্দর হে ॥

নাই যে কুসুম, মালা গাঁথব কিসে! কান্নার গান বীণায় এনেছি যে,

দূর হতে তাই শুনতে পাবে অন্ধকারে সুন্দর হে ॥

দিনের পরে দিন কেটে যায় সুন্দর হে।

মরে হৃদয় কোন্‌ পিপাসায় সুন্দর হে।

শূন্য ঘাটে আমি কী-যে করি-- রঙিন পালে কবে আসবে তরী,

পাড়ি দেব কবে সুধারসের পারাবারে সুন্দর হে ॥

রাগ: ভৈরবী
তাল: ষষ্ঠী
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৬ ফাল্গুন, ১৩৩১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১০ মার্চ, ১৯২৫
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
=========================================
আর নাই রে বেলা, নামল ছায়া ধরণীতে।

এখন চল্‌ রে ঘাটে কলসখানি ভরে নিতে।

জলধারার কলস্বরে সন্ধ্যাগগন আকুল করে,

ওরে, ডাকে আমায় পথের 'পরে সেই ধ্বনিতে॥

এখন বিজন পথে করে না কেউ আসা যাওয়া

ওরে, প্রেমনদীতে উঠেছে ঢেউ, উতল হাওয়া

জানি নে আর ফিরব কিনা, কার সাথে আজ হবে চিনা--

ঘাটে সেই অজানা বাজায় বীণা তরণীতে॥

রাগ: ইমন-কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৩ ভাদ্র, ১৩১৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1909
রচনাস্থান: বোলপুর
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভীমরাও শাস্ত্রী
================================================



No comments:

Post a Comment