Thursday 22 August 2013


ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে

ও বন্ধু আমার!

না পেয়ে তোমার দেখা, একা একা দিন যে আমার কাটে না রে ॥

বুঝি গো রাত পোহালো,

বুঝি ওই রবির আলো

আভাসে দেখা দিল গগন-পারে--

সমুখে ওই হেরি পথ, তোমার কি রথ পৌঁছবে না মোর-দুয়ারে ॥

আকাশের যত তারা

চেয়ে রয় নিমেষহারা,

বসে রয় রাত-প্রভাতের পথের ধারে।

তোমারি দেখা পেলে সকল ফেলে ডুববে আলোক-পারাবারে।

প্রভাতের পথিক সবে

এল কি কলরবে--

গেল কি গান গেয়ে ওই সারে সারে!

বুঝি-বা ফুল ফুটেছে, সুর উঠেছে অরুণবীণার তারে তারে ॥

রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২০ পৌষ, ১৩২৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
রচনাস্থান: কলকাতা
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
ফুলে ফুলে ঢ'লে ঢ'লে বহে কিবা মৃদু বায়,

তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়

পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে কুহূ কুহূ কুহূ গায়,

কি জানি কিসেরি লাগি প্রাণ করে হায় হায়!


রাগ: বিলাতি ভাঙা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1289
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1882
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী
============================================
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাই নি।

তোমায় দেখতে আমি পাই নি।

বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি ॥

আমার সকল ভালোবাসায় সকল আঘাত সকল আশায়

তুমি ছিলে আমার কাছে, তোমার কাছে যাই নি ॥

তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে আমার খেলায়--

আনন্দে তাই ভুলেছিলেম, কেটেছে দিন হেলায়।

গোপন রহি গভীর প্রাণে আমার দুঃখসুখের গানে

সুর দিয়েছ তুমি, আমি তোমার গান তো গাই নি ॥

রাগ: পিলু
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: কলকাতার পথে রেলগাড়িতে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
===========================================
সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে ।

তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—

সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময় ।

সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস ?

লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ ।

আমার চোখে তো সকলই শোভন,

সকলই নবীন, সকলই বিমল, সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,

বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো ।

তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়, হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়—

না জানে বেদন, না জানে রোদন, না জানে সাধের যাতনা যত ।

ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে, জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়,

হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে আকাশের তারা তেয়াগে কায় ।

আমার মতন সুখী কে আছে। আয় সখী, আয় আমার কাছে—

সুখী হৃদয়ের সুখের গান শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ ।

প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল একদিন নয় হাসিবি তোরা—

একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা।।


রাগ: বেহাগ-খাম্বাজ-বাউল
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1287
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1881
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
==========================================
আমার মল্লিকাবনে যখন প্রথম ধরেছে কলি

তোমার লাগিয়া তখনি, বন্ধু, বেঁধেছিনু অঞ্জলি॥

তখনো কুহেলীজালে,

সখা, তরুণী উষার ভালে

শিশিরে শিশিরে অরুণমালিকা উঠিতেছে ছলোছলি॥

এখনো বনের গান, বন্ধু হয় নি তো অবসান--

তবু এখনি যাবে কি চলি।

ও মোর করুণ বল্লিকা,

ও তোর শ্রান্ত মল্লিকা

ঝরো-ঝরো হল, এই বেলা তোর শেষ কথা দিস বলি॥


রাগ: কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1337
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1931
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
==========================================
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।

ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।

আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।

মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।

মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়--

বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।

হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়--

আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়॥


রাগ: মিশ্র ভূপালী-বিলাতি ভাঙা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
========================================
মায়বন বিহারিনী হরিণী
গহন স্বপন সঞ্চারিনী
কেন তারে ধরিবারে করি পণ
অকারণ
মায়াবন বিহারিনী

থাক থাক নিজ মনে দূরেতে
আমি শুধু বাসরীর সুরেতে
পরশ করিব ওর তন মন
অকারণ
মায়াবন বিহারিনী

চমকিবে ফাগুনেরো পবনে
বসিবে আকাশবাণী শ্রবনে
চমকিবে ফাগুনেরো পবনে
চিত্ত আগুনে হবে অনুভব
অকারণ

দূর হতে আমি তারে সাধিব
গোপনে বিরহ ডোরে বাধিব

বাধনবিহীন সেই যে বাঁধন
অকারণ
মায়াবন বিহারিনী

মায়বন বিহারিনী হরিণী
গহন স্বপন সঞ্চারিনী
কেন তারে ধরিবারে করি পন
অকারণ
মায়াবন বিহারিনী
=======================================
তুমি কোন্‌ কাননের ফুল, কোন্‌ গগনের তারা।

তোমায় কোথায় দেখেছি যেন কোন্‌ স্বপনের পারা ॥

কবে তুমি গেয়েছিলে, আঁখির পানে চেয়েছিলে

ভুলে গিয়েছি।

শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ওই নয়নের তারা ॥

তুমি কথা কোয়ো না, তুমি চেয়ে চলে যাও।

এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গ'লে যাও।

আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে চেয়ে থাকি মধুর প্রাণে,

তোমার আঁখির মতন দুটি তারা ঢালুক কিরণধারা ॥

রাগ: মিশ্র পিলু-বারোয়াঁ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1293
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1886
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
কেটেছে একেলা বিরহের বেলা আকাশকুসুমচয়নে।

সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমার দুখানি নয়নে॥

দেখিতে দেখিতে নূতন আলোকে কি দিল রচিয়া ধ্যানের পুলকে

নূতন ভুবন নূতন দ্যুলোকে মোদের মিলিত নয়নে॥

বাহির-আকাশে মেঘ ঘিরে আসে, এল সব তারা ঢাকিতে।

হারানো সে আলো আসন বিছালো শুধু দুজনের আঁখিতে।

ভাষাহারা মম বিজন রোদনা প্রকাশের লাগি করেছে সাধনা,

চিরজীবনেরি বাণীর বেদনা মিটিল দোঁহার নয়নে॥


রাগ: মিশ্র দেশ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৫ মাঘ, ১৩৪২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৯ জানুয়ারি, ১৯৩৬
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
=============================================
কিছু বলব ব'লে এসেছিলেম,

রইনু চেয়ে না ব'লে॥

দেখিলাম খোলা বাতায়নে মালা গাঁথো আপন-মনে,

গাও গুন্‌-গুন্‌ গুঞ্জরিয়া যূথীকুঁড়ি নিয়ে কোলে॥

সারা আকাশ তোমার দিকে

চেয়ে ছিল অনিমিখে।

মেঘ-ছেঁড়া আলো এসে পড়েছিল কালো কেশে,

বাদল-মেঘে মৃদুল হাওয়ায় অলক দোলে॥


রাগ: রামকেলী-ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
===========================================
যদি প্রেম দিলে না প্রাণে

কেন ভোরের আকাশ ভরে দিলে এমন গানে গানে?।

কেন তারার মালা গাঁথা,

কেন ফুলের শয়ন পাতা,

কেন দখিন-হাওয়া গোপন কথা জানায় কানে কানে?।

যদি প্রেম দিলে না প্রাণে

কেন আকাশ তবে এমন চাওয়া চায় এ মুখের পানে?

তবে ক্ষণে ক্ষণে কেন

আমার হৃদয় পাগল-হেন

তরী সেই সাগরে ভাসায় যাহার কূল সে নাহি জানে?।


রাগ: সাহানা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1344
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1938
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে

জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ॥

এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্‌ভ্রান্ত মেঘে মন চায়

মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥

মেঘমল্লার সারা দিনমান।

বাজে ঝরনার গান।

মন হারাবার আজি বেলা, পথ ভুলিবার খেলা-- মন চায়

মন চায় হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে॥

রাগ: কাফি
তাল: ২ + ২ ছন্দ
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
=========================================
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে

আমার নামটি লিখো-- তোমার

মনের মন্দিরে।

আমার পরানে যে গান বাজিছে

তাহার তালটি শিখো-- তোমার

চরণমঞ্জীরে॥

ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে

আমার মুখর পাখি-- তোমার

প্রাসাদপ্রাঙ্গণে॥

মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো

আমার হাতের রাখী-- তোমার

কনককঙ্কণে॥

আমার লতার একটি মুকুল

ভুলিয়া তুলিয়া রেখো-- তোমার

অলকবন্ধনে।

আমার স্মরণ শুভ-সিন্দুরে

একটি বিন্দু এঁকো-- তোমার

ললাটচন্দনে।

আমার মনের মোহের মাধুরী

মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-- তোমার

অঙ্গসৌরভে।

আমার আকুল জীবনমরণ

টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো-- তোমার

অতুল গৌরবে॥

রাগ: কীর্তন
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৮ আশ্বিন, ১৩০৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1897
রচনাস্থান: সাজাদপুর
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
==========================================
আনন্দধারা বহিছে ভুবনে,

দিনরজনী কত অমৃতরস উথলি যায় অনন্ত গগনে ॥

পান করি রবে শশী অঞ্জলি ভরিয়া--

সদা দীপ্ত রহে অক্ষয় জ্যোতি--

নিত্য পূর্ণ ধরা জীবনে কিরণে ॥

বসিয়া আছ কেন আপন-মনে,

স্বার্থনিমগন কী কারণে?

চারি দিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি,

ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি

প্রেম ভরিয়া লহো শূন্য জীবনে ॥

রাগ: মিশ্র মালকোষ
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1300
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1894
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
==============================================

No comments:

Post a Comment