Thursday 22 August 2013


নিত্য তোমার যে ফুল ফোটে ফুলবনে

তারি মধু কেন মনমধুপে খাওয়াও না?

নিত্যসভা বসে তোমার প্রাঙ্গণে,

তোমার ভৃত্যের সেই সভায় কেন গাওয়াও না?।

বিশ্বকমল ফুটে চরণচুম্বনে,

সে যে তোমার মুখে মুখ তুলে চায় উন্মনে,

আমার চিত্ত-কমলটিরে সেই রসে

কেন তোমার পানে নিত্য-চাওয়া চাওয়াও না?।

আকাশে ধায় রবি-তারা-ইন্দুতে,

তোমার বিরামহারা নদীরা ধায় সিন্ধুতে,

তেমনি করে সুধাসাগর-সন্ধানে

আমার জীবনধারা নিত্য কেন ধাওয়াও না?

পাখির কণ্ঠে আপনি জাগাও আনন্দ,

তুমি ফুলের বক্ষে ভরিয়া দাও সুগন্ধ,

তেমনি করে আমার হৃদয়ভিক্ষুরে

কেন দ্বারে তোমার নিত্যপ্রসাদ পাওয়াও না?।

রাগ: ইমন-বাউল
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৯ আশ্বিন, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৫ অক্টোবর, ১৯১৩
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
ফুলে ফুলে ঢ'লে ঢ'লে বহে কিবা মৃদু বায়,

তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়

পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে কুহূ কুহূ কুহূ গায়,

কি জানি কিসেরি লাগি প্রাণ করে হায় হায়!


রাগ: বিলাতি ভাঙা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1289
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1882
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী
============================================
ও কেন ভালোবাসা জানাতে আসে ওলো সজনী ।

হাসি খেলি রে মনের সুখে,

ও কেন সাথে ফেরে আঁধার-মুখে

দিনরজনী ।।

রাগ: পিলু
তাল: খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1290
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
========================================
ফিরে চল্‌, ফিরে চল্‌, ফিরে চল্‌ মাটির টানে--

যে মাটি আঁচল পেতে চেয়ে আছে মুখের পানে॥

যার বুক ফেটে এই প্রাণ উঠেছে, হাসিতে যার ফুল ফুটেছে রে,

ডাক দিল যে গানে গানে॥

দিক হতে ওই দিগন্তরে কোল রয়েছে পাতা,

জন্মমরণ তারি হাতের অলখ সুতোয় গাঁথা।

ওর হৃদয়-গলা জলের ধারা সাগর-পানে আত্মহারা রে

প্রাণের বাণী বয়ে আনে॥

রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৩ ফাল্গুন, ১৩২৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ মার্চ, ১৯২২
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
==============================================
মম অন্তর উদাসে

পল্লবমর্মরে কোন্‌ চঞ্চল বাতাসে॥

জ্যোৎস্নাজড়িত নিশা ঘুমে-জাগরণে-মিশা

বিহ্বল আকুল কার অঞ্চলসুবাসে॥

থাকিতে না দেয় ঘরে, কোথায় বাহির করে

সুন্দর সুদূরে কোন্‌ নন্দন-আকাশে।

অতীত দিনের পারে স্মরণসাগর-ধারে

বেদনা লুকানো কোন্‌ ক্রন্দন-আভাসে॥

রাগ: সাহানা
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1318
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1912
রচনাস্থান: বোলপুর
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে। ( নয়নের নয়ন ! )

হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে। ( হৃদয়বিহারী ! )

বাসনার বশে মন অবিরত ধায় দশ দিশে পাগলের মতো,

স্থির-আঁখি তুমি মরমে সতত জাগিছ শয়নে স্বপনে।

( তোমার বিরাম নাই, তুমি অবিরাম জাগিছ শয়নে স্বপনে।

তোমার নিমেষ নাই, তুমি অনিমেষ জাগিছ শয়নে স্বপনে। )

সবাই ছেড়েছে, নাই যার কেহ, তুমি আছ তার, আছে তব স্নেহ–

নিরাশ্রয় জন পথ যার গেহ সেও আছে তব ভবনে।

( যে পথের ভিখারি সেও আছে তব ভবনে।

যার কেহ কোথাও নেই সেও আছে তব ভবনে। )

তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর, সমুখে অনন্ত জীবনবিস্তার–

কালপারাবার করিতেছ পার কেহ নাহি জানে কেমনে।

( তরী বহে নিয়ে যাও কেহ নাহি জানে কেমনে।

জীবনতরী বহে নিয়ে যাও কেহ নাহি জানে কেমনে। )

জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি, তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,

যত পাই তোমায় আরো তত যাচি– যত জানি তত জানি নে।

( জেনে শেষ মেলে না–মন হার মানে হে। )

জানি আমি তোমায় পাব নিরন্তর লোক-লোকান্তরে যুগ-যুগান্তর–

তুমি আর আমি মাঝে কেহ নাই, কোনো বাধা নাই ভুবনে।

( তোমার আমার মাঝে কোনো বাধা নাই ভুবনে। )

রাগ: যোগিয়া-কীর্তন
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1293
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1887
===========================================
আজ যেমন ক'রে গাইছে আকাশ তেমনি ক'রে গাও গো।

আজ যেমন ক'রে চাইছে আকাশ তেমনি ক'রে চাও গো ॥

আজ হাওয়া যেমন পাতায় পাতায় মর্মরিয়া বনকে কাঁদায়,

তেমনি আমার বুকের মাঝে কাঁদিয়া কাঁদাও গো ॥


রাগ: কীর্তন
তাল: মুক্তছন্দ
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আষাঢ়, ১৩১৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1911
স্বরলিপিকার: সুধীরচন্দ্র কর
==========================================
মাটি তোদের ডাক দিয়েছে আয় রে চলে,

আয় আয় আয়।

ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে--

মরি হায় হায় হায়।

হাওয়ার নেশায় উঠল মেতে,

দিগ্‌ বধূরা ফসলখেতে,

রোদের সোনা ছড়িয়ে পড়ে ধরার আঁচলে--

মরি হায় হায় হায়।

মাঠের বাঁশি শুনে শুনে আকাশ খুশি হল।

ঘরেতে আজ কে রবে গো, খোলো দুয়ার খোলো।

আলোর হাসি উঠল জেগে,

পাতায় পাতায় চমক লেগে

বনের খুশি ধরে না গো, ওই যে উথলে--

মরি হায় হায় হায়॥

রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1344
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1938
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
==========================================
যা হবার তা হবে।

যে আমারে কাঁদায় সে কি অমনি ছেড়ে রবে?।

পথ হতে যে ভুলিয়ে আনে পথ যে কোথায় সেই তা জানে,

ঘর যে ছাড়ায় হাত সে বাড়ায়-- সেই তো ঘরে লবে ॥

রাগ: খাম্বাজ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1318
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1911
স্বরলিপিকার: সুধীরচন্দ্র কর
=======================================
কেন বাণী তব নাহি শুনি নাথ হে?

অন্ধজনে নয়ন দিয়ে অন্ধকারে ফেলিলে, বিরহে তব কাটে দিনরাত হে ॥

স্বপনসম মিলাবে যদি কেন গো দিলে চেতনা--

চকিতে শুধু দেখা দিয়ে চিরমরমবেদনা,

আপনা-পানে চাহি শুধু নয়নজলপাত হে ॥

পরশে তব জীবন নব সহসা যদি জাগিল

কেন জীবন বিফল কর-- মরণশরঘাত হে।

অহঙ্কার চূর্ণ করো, প্রেমে মন পূর্ণ করো,

হৃদয় মন হরণ করি রাখো তব সাথ হে ॥

রাগ: ভৈরবী
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1293
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1886
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
=========================================
ওকে ধরিলে তো ধরা দেবে না--

ওকে দাও ছেড়ে, দাও ছেড়ে।

মন নাই যদি দিল, নাই দিল,

মন নেয় যদি নিক কেড়ে॥

এ কী খেলা মোরা খেলেছি, শুধু নয়নের জল ফেলেছি--

ওরই জয় যদি হয় জয় হোক, মোরা হারি যদি, যাই হেরে॥

এক দিন মিছে আদরে মনে গরব সোহাগ না ধরে,

শেষে দিন না ফুরাতে ফুরাতে সব গরব দিয়েছে সেরে।

ভেবেছিনু ওকে চিনেছি, বুঝি বিনা পণে ওকে কিনেছি--

ও যে আমাদেরি কিনে নিয়েছে, ও যে, তাই আসে, তাই ফেরে॥

রাগ: ভৈরবী
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1316
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1909
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
=============================================
কেহ কারো মন বুঝে না, কাছে এসে সরে যায়।

সোহাগের হাসিটি কেন চোখের জলে মরে যায়॥

বাতাস যখন কেঁদে গেল প্রাণ খুলে ফুল ফুটিল না,

সাঁঝের বেলা একাকিনী কেন রে ফুল ঝরে যায়॥

মুখের পানে চেয়ে দেখো, আঁখিতে মিলাও আঁখি--

মধুর প্রাণের কথা প্রাণেতে রেখো না ঢাকি।

এ রজনী রহিবে না, আর কথা হইবে না--

প্রভাতে রহিবে শুধু হৃদয়ের হায়-হায়॥

রাগ: কাফি-সিন্ধু
তাল: আড়াঠেকা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1290
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1884
=========================================
কেন যে মন ভোলে আমার মন জানে না।

তারে মানা করে কে, আমার মন মানে না ॥

কেউ বোঝে না তারে, সে যে বোঝে না আপ্‌নারে।

সবাই লজ্জা দিয়ে যায়, সে তো কানে আনে না ॥

তার খেয়া গেল পারে, সে যে রইল নদীর ধারে।

কাজ ক'রে সব সারা ওই এগিয়ে গেল কারা,

আন্‌মনা মন সে দিক-পানে দৃষ্টি হানে না ॥

রাগ: ইমন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১৩২৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1921
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা।

ওই-যে সুদূর নীহারিকা

যারা করে আছে ভিড় আকাশের নীড়,

ওই যারা দিনরাত্রি

আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী গ্রহ তারা রবি,

তুমি কি তাদের মতো সত্য নও।

হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি॥

নয়নসমুখে তুমি নাই,

নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই-- আজি তাই

শ্যামলে শ্যামল তুমি, নীলিমায় নীল।

আমার নিখিল তোমাতে পেয়েছে তার অন্তরের মিল।

নাহি জানি, কেহ নাহি জানে--

তব সুর বাজে মোর গানে,

কবির অন্তরে তুমি কবি--

নও ছবি, নও ছবি, নও শুধু ছবি॥

রাগ: কানাড়া
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ কার্তিক, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২১ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: এলাহাবাদ
===============================================
এই সকাল বেলার বাদল-আঁধারে

আজি বনের বীণায় কী সুর বাঁধা রে॥

ঝরো ঝরো বৃষ্টিকলরোলে তালের পাতা মুখর ক'রে তোলে রে,

উতল হাওয়া বেণুশাখায় লাগায় ধাঁদা রে॥

ছায়ার তলে তলে জলের ধারা ওই

হেরো দলে দলে নাচে তাথৈ থৈ-- তাথৈ থৈ।

মন যে আমার পথ-হারানো সুরে সকল আকাশ বেড়ায় ঘুরে ঘুরে রে,

শোনে যেন কোন্‌ ব্যাকুলের করুণ কাঁদা রে॥

রাগ: কাফি
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ জুন, ১৯২২
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================
স্বপন যদি ভাঙিলে রজনীপ্রভাতে

পূর্ণ করো হিয়া মঙ্গলকিরণে ॥

রাখো মোরে তব কাজে,

নবীন করো এ জীবন হে ॥

খুলি মোর গৃহদ্বার ডাকো তোমারি ভবনে হে ॥

রাগ: রামকেলী
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1309
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1903
স্বরলিপিকার: ভি. ভি. ওয়াঝলওয়ার
========================================
নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল,

বসন্তে সৌরভের শিখা জাগল॥

আকাশের লাগে ধাঁদা রবির আলো ওই কি বাঁধা ॥

বুঝি ধরার কাছে আপনাকে সে মাগল,

সর্ষেক্ষেতে ফুল হয়ে তাই জাগল॥

নীল দিগন্তে মোর বেদনখানি লাগল,

অনেক কালের মনের কথা জাগল।

এল আমার হারিয়ে-যাওয়া কোন্‌ ফাগুনের পাগল হাওয়া।

বুঝি এই ফাগুনে আপনাকে সে মাগল,

সর্ষেক্ষেতে ঢেউ হয়ে তাই জাগল॥

রাগ: পরজ-বসন্ত
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আষাঢ়, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1922
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
=========================================
আমার মনের মাঝে যে গান বাজে শুনতে কি পাও গো

আমার চোখের 'পরে আভাস দিয়ে যখনি যাও গো ॥

রবির কিরণ নেয় যে টানি ফুলের বুকের শিশিরখানি,

আমার প্রাণের সে গান তুমি তেমনি কি নাও গো ॥

আমার উদাস হৃদয় যখন আসে বাহির-পানে

আপনাকে যে দেয় ধরা সে সকলখানে।

কচি পাতা প্রথম প্রাতে কী কথা কয় আলোর সাথে,

আমার মনের আপন কথা বলে যে তাও গো ॥

রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা বা খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1328
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1921
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
রাত্রি এসে যেথায় মেশে দিনের পারাবারে

তোমায় আমায় দেখা হল সেই মোহানার ধারে ॥

সেইখানেতে সাদায় কালোয় মিলে গেছে আঁধার আলোয়--

সেইখানেতে ঢেউ ছুটেছে এ পারে ওই পারে ॥

নিতলনীল নীরব-মাঝে বাজল গভীর বাণী,

নিকষেতে উঠল ফুটে সোনার রেখাখানি।

মুখের পানে তাকাতে যাই, দেখি-দেখি দেখতে না পাই--

স্বপন-সাথে জড়িয়ে জাগা, কাঁদি আকুল ধারে ॥

রাগ: ভৈরব
তাল: ত্রিতাল বা একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৫ আশ্বিন, ১৩১৭
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================
আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী।

আমি সকল দাগে হব দাগি॥

তোমার পথের কাঁটা করব চয়ন, যেথা তোমার ধুলার শয়ন

সেথা আঁচল পাতব আমার-- তোমার রাগে অনুরাগী॥

আমি শুচি-আসন টেনে টেনে বেড়াব না বিধান মেনে,

যে পঙ্কে ওই চরণ পড়ে তাহারি ছাপ বক্ষে মাগি॥

রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: সাহানা দেবী
========================================
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে--

তুমি জান না, আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে॥

সে সাধনায় মিশিয়া যায় বকুলগন্ধ,

সে সাধনায় মিলিয়া যায় কবির ছন্দ--

তুমি জান না, ঢেকে রেখেছি তোমার নাম

রঙিন ছায়ার আচ্ছাদনে॥

তোমার অরূপ মূর্তিখানি

ফাল্গুনের আলোতে বসাই আনি।

বাঁশরি বাজাই ললিত-বসন্তে, সুদূর দিগন্তে

সোনার আভায় কাঁপে তব উত্তরী

গানের তানের সে উন্মাদনে॥

রাগ: বাহার-সোহিনী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): মার্চ, ১৯৩৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
============================================
পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে

পাগল আমার মন জেগে ওঠে॥

চেনাশোনার কোন্‌ বাইরে যেখানে পথ নাই নাই রে

সেখানে অকারণে যায় ছুটে॥

ঘরের মুখে আর কি রে কোনো দিন সে যাবে ফিরে।

যাবে না, যাবে না--

দেয়াল যত সব গেল টুটে॥

বৃষ্টি-নেশা-ভরা সন্ধ্যাবেলা কোন্‌ বলরামের আমি চেলা,

আমার স্বপ্ন ঘিরে নাচে মাতাল জুটে--

যত মাতাল জুটে।

যা না চাইবার তাই আজি চাই গো,

যা না পাইবার তাই কোথা পাই গো।

পাব না, পাব না,

মরি অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে॥

রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
=============================================
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।

এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে ॥

আমার এই দেহখানি তুলে ধরো,

তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো--

নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে ॥

আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব

সারা রাত ফোটাক তারা নব নব।

নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো,

যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো--

ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে ঊর্ধ্ব পানে ॥

রাগ: গৌড়সারং
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১১ ভাদ্র, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৮ অগাস্ট, ১৯১৪
রচনাস্থান: সুরুল
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
============================================

No comments:

Post a Comment